সময় এখন মালালার
১৩ নভেম্বর ২০১২এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যে কাজগুলো করতে বেশি ভালো লাগে সেগুলো করার কথা ভাবতেও পারছে না মালালা ইউসুফজাই৷ তালেবান চিরতরে মুখ বন্ধ করতে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল তাকে৷ গুলিতে ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়েছে পাকিস্তানের এই কিশোরিকে৷ মৃত্যুর হাতছানি হঠাৎ আসেনি তার সামনে৷ ও জানতো নারী শিক্ষার পক্ষে কথা বলে গেলে, প্রকাশ্যে তালেবানের সমালোচনা করলে মেরে ফেলার চেষ্টা হবেই৷ তারপরও চলেছে তার যুদ্ধ৷ মেয়েরা লেখাপড়া করবে – নিরীহ এ দাবি আদায়ের জন্য নিজের সীমিত গণ্ডির মধ্যে ছোট্ট একটি নিরস্ত্র মেয়ের যুদ্ধ৷ তাতেই ভড়কে গেছে তালেবান৷ ক্ষিপ্ত হয়েছে, হয়েছে হত্যার নেশায় উন্মত্ত৷ তাই তো মালালা এখনো ব্রিটেনের হাসপাতালে৷ কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে জানা নেই!
তাই বলে তার প্রিয়জনেরা, সহমর্মীরা, সমমতাবলম্বীরা বসে নেই৷ জাতিসংঘ ১০ই নভেম্বরকে ‘মালালা দিবস' করেছে এটা এখন পুরোনো খবর৷ দিনটি উদযাপনের খবরও প্রচারিত হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে৷ প্রতিদিনই মালালাকে নিয়ে আসছে নতুন নতুন খবর৷ তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোয়ন দেবার দাবি উঠেছে৷ দাবির পক্ষে মতামত জানিয়েছে পাকিস্তানের ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ৷ সোমবার পাকিস্তানের মানবোন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় কমিশনের চেয়ারম্যান নাফিসা শাহ জানিয়েছেন, সে দেশের ১৬টি এলাকায় শিগগিরই কিছু স্কুল হবে৷ স্কুলগুলোতে পড়বে গরীব মেয়েরা৷ স্কুলগুলোর কী নাম হবে, জানেন? মালালা স্কুল!
সোমবার পাকিস্তানের ছাত্র এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোও মালালার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে৷ মালালার জন্মস্থান মিঙ্গোরায় তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করেছে শত শত শিক্ষার্থী৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরোক্ষভাবে৷ সেখানে একটা ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন তিনি৷ বার্তায় বলা হয়েছে, মালালা এখন সারা বিশ্বের সব মেয়েরই শিক্ষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক৷
পাকিস্তানের সোয়াত এলাকার মেয়ে মালালা ইউসুফজাই গত মাসের শুরুতেও সরব ছিল নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে তালেবান জঙ্গিদের অবস্থানের সমালোচনায়৷ তালেবান যে মেয়েদের স্কুলে যাবার পথে ভয়ভীতি দেখাতো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতো – মালালা এসবের কট্টর সমালোচক৷ ১১ বছর বয়সেই এ নিয়ে বিবিসি ব্লগে লিখে নজর কাড়ে সবার৷ তারপর থেকেই তালেবান প্রাণনাশের হুমকি হুমকি দিয়ে আসছিল তাকে৷ একটুও ভয় না পেয়ে মালালা মেয়েদের লেখাপড়ার পক্ষে আর তালেবানের বিপক্ষে কথা বলে যাচ্ছিল৷ এ কারণে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য পাকিস্তানে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছে সে৷ এবার কি নোবেলও? বয়স কম বলে প্রশ্ন তুলবেন কেউ? তাহলে পাল্টা প্রশ্ন আসতেই পারে, ‘‘কম বয়সে সাহসিকতা, উদারতা, মহত্বে বড়দের ছাড়িয়ে যাওয়া কি কারো দুর্বলতা?'' নোবেল কমিটি কি বলবে তা একান্তই তাঁদের ধরাবাঁধা নীতিমালা এবং ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপার৷ এ মুহূর্তে আসল কথা হলো, মালালার পক্ষে দাবি উঠছে৷ পুরস্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ তো নোবেল কমিটি অনেকবারই করেছে, এ দাবি মেনে নেয় কিনা সেটাই এখন দেখার৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)