নিন্দা জানিয়েছে বাংলা ব্লগাররা
১২ অক্টোবর ২০১২‘আমার মেয়ে হলে নাম রাখবো মালালা' - ফেসবুকে ঠিক এভাবেই লিখেছেন জাকিয়া আহমেদ৷ বাংলাদেশের এই নারী সাংবাদিক পাকিস্তানে মালালা ইউসুফজাইয়ের উপর হামলার প্রেক্ষিতে বলেছেন একথা৷ ১৪ বছর বয়সি কিশোরী মালালা৷ সোয়াত উপত্যকায় বাস তাঁর৷ তালেবানের নারী শিক্ষা নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি৷ তিন বছর আগে বিবিসি ব্লগে এই বিষয়ে তাঁর লেখা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল৷
সেই মালালা এখন হাসপাতালে৷ তাঁর মাথায় গুলি করেছে তালেবান জঙ্গিরা৷ মালালাকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতেই এই হামলা৷ তালেবান জঙ্গিরা ভেবেছিল মালালা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, তবে সেটা হয়নি৷ গুরুতর আহত মালালা এখনো বেঁচে আছেন৷ তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়৷ সর্বশেষ খবর হচ্ছে, মালালাকে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য৷
তীব্র নিন্দা
মালালার উপর তালেবানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ব্লগ কমিউনিটি৷ বাংলা ব্লগ সাইটে এবং ফেসবুকে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অসংখ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারী৷ এই বিষয়ে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের নিবন্ধের শিরোনাম, ‘‘ব্লগার মালালাকে - ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো''৷
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে আসিফ বলেন, ‘‘এই খবরটা শোনার পর আমি হতভম্ব, বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম৷ তারপর আমি একটি ব্লগ পোস্ট করি৷ এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা, আমরা খুবই আপসেট৷ তবে আমরা মালালার প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি৷ এবং আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছি৷''
আতঙ্ক
ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতার একটি বিভাগে ইউজার প্রাইজ জয়ী ব্লগার আসিফ মনে করেন, মালালার উপর হামলার পর বাংলা ব্লগারদের মধ্যেও খানিকটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে৷ তবে বাংলা ব্লগাররা এখন মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অনেক ঐক্যবদ্ধ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখছি যে, একটু হয়ত আতঙ্ক তৈরি হয়েছে৷ (পাকিস্তানি) ব্লগারের উপর আক্রমণ আসায়, আমাদের উপরেও এই ধরনের আক্রমণ আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না৷ কারণ আমরা দেখেছি, পাকিস্তানে যে ধরনের সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয়, কিছুদিন পর তার ছোঁয়া আমাদের দেশেও এসে পৌঁছায়৷ কিছু না কিছু হয়৷ ফলে আমরা কিছুটা হলেও আতঙ্কিত৷''
আসিফ বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার৷ বাংলা ব্লগ সবসময়ই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করবে৷ সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান শক্ত৷''
মালালার প্রতি সমর্থন
ব্লগার কাজী মাহবুব হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ব্লগে লিখেছেন, ‘‘মালালা ইউসুফজাই লেখাপড়া করতে চেয়েছে শুধু...''৷ এই ব্লগার তাঁর নিবন্ধে মালালাকে নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদনও যোগ করেছেন৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগে এই বিষয়ে নারায়ন সরকার লিখেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত তার আশংকাই সত্যি হলো৷ তবে আরও নির্মমভাবে - তালেবান তার মুখ এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়নি বা অপহরণ করেনি৷ একেবারে পৃথিবী থেকেই (তাকে) মুছে দিতে চেয়েছে৷ তার মাথায় ও ঘাড়ে গুলি করে তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে৷ মালালা এখন আশংকাজনক অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে৷'
অপর কমিউটিনি ব্লগ সাইট আমার ব্লগ ডটকমে মালালাকে নিয়ে একটি কবিতা প্রকাশ করেছেন ব্রত রায়৷ তিনি তাঁর কবিতার একাংশে লিখেছেন,
‘‘মৃত্যুকে তোর ভয়টা কিসের
ভয় করে সে তোকে –
সেই ভয়েরই দেখছি ছায়া
তালেবানের চোখে!''
একই ব্লগ সাইটে অপর ব্লগার ফারুক লিখেছেন, ‘তালেবান - এরা না মানুষ , না মুসলমান৷ এরা পশু, মুসলমান নামের কলঙ্ক৷ ইসলামের মূল কোরানের কোথাও নারীশিক্ষা নিষিদ্ধের কথা বলা নেই৷ নিরপরাধ একটি মেয়েকে লক্ষ্য করে গুলি করতে এই পিশাচদের হাত কি একটুও কাপলোনা? এদের ঘরে কি মা, বোন, কন্যা নেই? এরা রক্ত পিপাসু হায়েনা৷'
সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে ডয়চে ভেলের শ্রোতা পাঠকরাও মালালার উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ সালাউদ্দিন ডলার লিখেছেন, ‘সাবাস মা, জননী তোমাকে যে নামেই ডাকি৷ তোমার সাথে আমাদের দোয়া আছে৷' সাইখ আলী আজম লিখেছেন, ‘সবার এই রকম হওয়া দরকার৷ আমি তার কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করি৷'
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ