সমালোচনায়, প্রেরণায় মালালা
১২ জুলাই ২০১৩শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ সভার অন্যরকম আকর্ষণ মালালা ইউসুফজাই৷ পাকিস্তানের এই কিশোরী তাঁর ১৬তম জন্মদিনে সুযোগ পেয়েছেন জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার৷ পাকিস্তানে নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখতে গিয়ে তালেবানের হামলার শিকার হওয়া মালালা যে নারী শিক্ষা নিয়ে কথা বলবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
তালেবান হামলার পর মুমূর্ষু অবস্থায় ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়ার পরে সুচিকিৎসায় সেরে উঠেছেন মালালা৷ টাইটেনিয়ামের প্লেট দিয়ে মাথার খুলির ফুটো বন্ধ করে, শ্রবণশক্তি অনেকটাই ফিরে পেয়ে মালালা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন ব্রিটেনেই৷ এ বছর টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের তালিকায় স্থান দিয়েছে তাঁকে৷ তার আগেই জাতিসংঘের উদ্যোগে পালিত হয়েছে ‘মালালা দিবস'৷ এক অর্থে, এই শুক্রবারটাও তো জাতিসংঘের মালালা দিবস৷ কারণ তাঁর বক্তব্যের দিনে আর কারো কথা কি খুব একটা গুরুত্ব পাবে!
মালালা ইউসুফজাইয়ের এমন তারকা মর্যাদাকে অনেকেই অবশ্য ভালো চোখে দেখছেন না৷ পাকিস্তানেও অনেকেই মনে করেন যে, খুব বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে মালালাকে নিয়ে৷ এমনিতে পরিসংখ্যান বলছে মালালা তালেবান হামলার শিকার হওয়ার পর পাকিস্তানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বেড়েছে৷ তাঁর জন্মস্থান সোয়াতে এ বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ১ লক্ষ ২ হাজার ৩৭৪ জন ছাত্রী৷ গত বছর এই সময়ে ভর্তি হয়েছিল মাত্র ৯৬ হাজার ৫৪০ জন৷ আফগান সীমান্তবর্তী এ জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা দিলশাদ বিবি জানিয়েছেন এই তথ্য৷
তবে পাকিস্তানের অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এই পরিবর্তনে মালালার ভূমিকা খুবই গৌণ৷ তাঁদের মতে মালালার মতো অনেক মেয়েই তালেবানের বাধার মুখে লেখাপড়া চালিয়ে আসছিল৷ আর তার মাধ্যমে আগে থেকেই মেয়েদের মাঝে প্রকাশিত হচ্ছিল আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের পথ ধরার ইতিবাচক মানসিকতা৷ ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে সোয়াত এবং আশেপাশের এলাকায় তালেবানের দাপট এখন আগের তুলনায় অনেক কম৷ সে কারণেই নাকি মেয়েরা আগের তুলনায় আরো বেশি হারে আসছে স্কুলে৷
এমন ধারণা একেবারে অমূলক নয়৷ সোয়াতের মিঙ্গুরা অঞ্চলের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আনোয়ারা সুলতানা মনে করেন, তালেবান আতঙ্ক অনেকটা কেটে গেছে বলেই মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করছে এবং সেই নিরাপত্তাবোধ থেকেই তারা আরো বেশি করে আসছে স্কুলে৷
সাঈদা রহিম ১৩ বছরের এক কিশোরী৷ তালেবানের হুমকির মুখে সোয়াত ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল তার পরিবার৷ তিন মাস এলাকায় ফিরতে পারেনি তারা৷ সাঈদার তখন মনে হয়েছিল আর বুঝি লেখাপড়া করা হবে না৷ তবে সম্প্রতি বাবা-মায়ের সঙ্গে সে-ও ফিরেছে সোয়াতে৷ শুরু হয়েছে স্কুলে যাওয়া-আসা৷ মালালা জাতিসংঘে ভাষণ দেবে শুনে সাঈদা খুব খুশি৷ বললো, ‘‘আমি ওর (মালালা) ভাষণ খুব পছন্দ করি৷ ও যে কাজটা শুরু করেছে তা আমি চালিয়ে যেতে চাই৷ আমিও প্রচারে আসতে চাই, চাই সব মা-বাবাকে তাঁদের মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে৷''
মালালা ইউসুফজাই সমালোচকদের কথা অনুযায়ী যদি ‘ঘটনাক্রমে তারকা' হয়েও থাকেন, এ তারার আলো যে অনেক তা অস্বীকার করবেন কী করে!