1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সমাবেশ করে আলোচনায় জামায়াত

১১ জুন ২০২৩

প্রায় এক দশক পর শনিবার পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামি আবারো আলোচনায় এসেছে। এটা নিয়ে রাজনীতিতে নানা হিসাবের কথা শোনা যাচ্ছে। সরকারের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন কেউ কেউ।

https://p.dw.com/p/4SRfh
এক দশক পর শনিবার পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামি
এক দশক পর শনিবার পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামিছবি: Sheikh Ferdous

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের রবিবার ডয়চে ভেলেকে  বলেছেন," বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট এখন আর কার্যকর নেই।তবে আমরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে আছি।”

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন," জামায়াতকে বিএনপি মাঠে নামিয়েছে। বিএনপি জামায়াতকে দিয়ে আবার অগ্নিসন্ত্রাস চালাতে চায়।”

এর জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন," জামায়াতকে সামাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমরা কীভাবে মাঠে নামালাম?”

'জামায়াতকে আমরা কীভাবে মাঠে নামালাম'

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন," আমরা এখন ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি দেব, কেন্দ্র থেকে সারাদেশে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই । আমাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি চাই।

তিনি বলেন, "বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট এখন আর কার্যকর নেই। তবে আমরা তো সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছি। আর কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা বিএনপির সঙ্গে জোট না আলাদা নির্বাচন করবো সেটা তখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। তবে জামায়াত ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দিতে সক্ষম।”

তার কথায়, " ১০ বছর ধরে আমাদের প্রকাশ্যে কোনো সমবাশে করতে দেয়নি সরকার। এবার পুলিশ প্রশাসনের বোধোদয় হয়েছে তাই অনুমতি দিয়েছে বলে মনে করি। অন্য কোনো কারণ আছে বলে মনে করিনা। কারণ সভা সমাবেশ করা আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, মানবাধিকার।”

সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা বিএনপি জোটে না গিয়ে আলাদা নির্বাচনের শর্তে তারা সমাবেশের অনুমতি পেল কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন," সেটা তো এখন আলোচনা হওয়ার কথা নয়। নির্বাচন তো এখনো আসেনি। আর কেয়ারটেকার সরকার আসলে এই প্রশ্ন আসবে। আজকে( রবিবার) ওবায়দুল কাদের সাহেব যা বলেছেন তারপর তো আর এই প্রশ্ন আসেনা। আর জামায়াত কোনো আঁতাতের রাজনীতি করেনা।”

দলের নিবন্ধন বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন," বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে পেন্ডিং আছে। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল নাও করতে পারত। আমরা আশা করি এখনকার নির্বাচন কমিশন আমাদের দলের নিবন্ধনের বিষয়টি সুবিবেচনায় দেখবে।”

তিনি আরো বলেন," জামায়াত একটি শান্তিপ্রিয় দল। আমরা কোনো সন্ত্রাসে বিশ্বাস করিনা। এরপরও সরকার এক দশক আমাদের কোনো রাজনৈতি কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। তারপরও এখন অনুমতি দেয়ায় আমরা পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।”

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রবিবার ঢাকায় ‘বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের' বিরুদ্ধে আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছেন,"দেশব্যাপী আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপি মাঠে নামিয়েছে।” 

'জামায়াতকে নামিয়ে সন্ত্রাস বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে'

তার কথায়, ‘‘যারা রক্তে রক্তে বাংলাদেশকে রক্তের দরিয়া বানাতে চায়, সেই অপশক্তি জামায়াত মাঠে নেমেছে। জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে তাদের বিশ্বাসের ঠিকানা, তাদের আসল মুরব্বি বিএনপি।''

এর জবাবে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন," এই সরকার অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছেনা, বাধা দিচ্ছে। আমরাও তার শিকার। এখন জামায়াতকে তারা অনুমতি দিয়েছে। কেন এতদিন সমাবেশ করতে দেয়নি, এখন আবার কেন দিলো এটা সরকারই ভালো বলতে পারবে। আমাদের কোনো পর্যবেক্ষণ নাই। আর আওয়ামী লীগ হলো একটি সন্ত্রাসী দল। তারা  সব সময় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চায়।জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা কি আমাদের আছে?”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন," জামায়াতের সঙ্গে আমাদের এখন আর জোট নাই। তবে আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের।  তারা আলাদাভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছে। আর নির্বাচনের সময় আমাদের সঙ্গে জামায়াতের জোট হবে কিনা সেটা নির্বাচনের সময় বোঝা যাবে।”

সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মতিঝিলে অনুমতি নিয়ে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামি। গত ৩০ ডিসেম্বর তারা মালিবাগে হঠাৎ বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তাদের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়।  ১০ বছর পর ৫ জুন তারা আবার সমাবেশের অনুমতি চায়। শনিবার তারা পুলিশের অনুমতি নিছেন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করল। পুলিশের শর্ত ছিলো মিলনায়তনের বাইরে তারা যেতে পাববেনা। তবে তাদের সমাবেশ সামনের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন ।

এদিকে ঢাকায় পুলিশের একটি অনুষ্ঠনে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসাদুজ্জামান খানের কাছে জানতে চান যে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া সরকারের জামায়াত নীতির কোনো পরিবর্তন কী না? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,""জামায়াত একটি অনিবন্ধিত দল। তারা মাঝেমধ্যেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠান করে। ইনডোরেও তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। দলটি অনুষ্ঠান করতে মাঠের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা অনুমতি দেননি। দলটি আবদ্ধ স্থানে ইনডোরে মিটিং করতে চেয়েছে, তারা তা দেননি। পরে মৌখিকভাবে পুলিশ কমিশনার অনুমতি দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।”

সরকার বিরোধী বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরীক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন," গণতান্ত্রিক বোধোদয়ের কারণে সরকার জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সেটা তো বলা যায়না। সেটা হলো তো তারা বলত। তা না বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  ওবায়দুল কাদের সাহেব তো বললেন যে বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে খেলছে। তিনি যখন বলেন সেটা তো দলের কথাই ধরে নেবো। তার মানে হলে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি কোনো কম্পালশন বা অসৎ উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে।”

তার কথায়," কম্পালশন কী আর হবে? আমেরিকার চাপ। কিন্তু সেটার কারণে অনুমতি দেবে? যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়োজনে না যাওয়ার কথা, ভিসা না নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে জামায়াতকে অনুমতি কেন? আমার মনে হয় জামায়াতকে মাঠে নামিয়ে সন্ত্রাসকে বৈধ করার একটা অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে আসল উদ্দেশ্য কী, কেন অনুমতি দেয়া হলো তা পরিষ্কার হতে আরো কিছু সময় লাগবে।”