জামায়াতকে আপিলের জন্য দুই মাস সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২৩রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী' কে দেয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করতে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। রিটকারী পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
তানিয়া আমীর বলেন, "মামলাটি শুনানির জন্য আমরা অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। আদালত তাদের অনেকবার সময় দিয়েছেন। ওনারা গড়িমসি করে রেডি করছে না। আজকে চূড়ান্ত আদেশ দেওয়া হয়েছে। যদি আট সপ্তাহের মধ্যে ফাইল (আপিলের সার সংক্ষেপ) শুনানির জন্য রেডি না করে তাহলে ডিফল্ট (খারিজ) হয়ে যাবে।"
জামায়াতের এক আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, "দুই মাসের মধ্যে আমরা প্রস্তুত করতে পারবো। আমাদের প্রধান আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। এছাড়া ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও এহসান সিদ্দিক আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তারা এ মামলাটি পরিচালনা করবেন।"
তিনি বলেন, "আদালতের আদেশ অনুসারে মামলার শুনানিতে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে। আশা করি জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাবে।"
নিবন্ধন, রিট ও নিবন্ধন বাতিল
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। সে সময় সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের কথা ছিল।
পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেন।
জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চার জনকে রিটে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।
এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনকারীরা বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ মার্চ আবেদনটি বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। ১০ মার্চ সাংবিধানিক ও আইনের প্রশ্ন জড়িত থাকায় বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন দ্বৈত বেঞ্চ। ওইদিন প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতির সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।
রিটের চূড়ান্ত রায়ে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। তবে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন।
পরে ওই রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপর একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল দায়ের করে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রসঙ্গত, জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর পাঁচবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ' পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী' করা হয়।
একেএ/কেএম (বাংলা ট্রিবিউন)