সমকামী বিয়ে কি ভারতে বৈধ হচ্ছে?
৭ ডিসেম্বর ২০২২২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ঔপনিবেশিক যুগের একটি আইন বাতিল করার পর সমকামিতা বৈধ হয়। সম্প্রতি আদালত সমকামী বিবাহের স্বীকৃতি চেয়ে আবেদনের জবাব দিতে সরকারকে এক মাস বেধে দিয়েছে।
গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বে দেশটির শীর্ষ আদালত জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুটি পিটিশনের উপর শুনানি করেছে। দুই লজিবিটিকিউ যুগল পিটিশন দুটি দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, রাজ্য তাদের বিবাহিত হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে, যা তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে।
প্রথম পিটিশনটি যে দম্পতি করে তারা প্রায় এক দশক ধরে একসাথে বসবাস করছে। গত বছর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারা একে অপরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। শুধু তাই না, তাদের পিতা-মাতা, পরিবারবর্গ ও বন্ধুরাও তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।
দ্বিতীয় পিটিশন করা দম্পতি ১৭ বছরের সম্পর্কে জড়িত, তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। তবে বৈবাহিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তারা তাদের সন্তানের সাথে বৈধ অভিভাকত্ব পাচ্ছেন না।
সমকামী বিবাহের স্বীকৃতি দাবি করে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান ভারতের বিভিন্ন আদালতে। ভারতের ১৯৫৪ স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের অধীনে সমকামী বিবাহের স্বীকৃতি চাওয়া নিয়ে করা অন্য আবেদনগুলো দিল্লি এবং কেরালার উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
"বিয়ে থেকে বিরত রাখা সমতার অধিকারের লঙ্ঘন। আমরা আদালতকে বলেছি, বিবাহের বৈধতা না থাকার কারণে আমাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, দত্তক গ্রহণ এবং আর্থিক বিষয়গুলোর উপর প্রভাব পড়ছে। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সদস্যদের অন্যান্য নাগরিকদের মতো একই মানবিক, মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে,” নাম প্রকাশ না করে ডয়চে ভেলেকে বলেন এক সমকামী ব্যক্তি।
বৈধতার পথ কি?
ভারতের আদালত সমকামিতা আর কোন অপরাধ না ঘোষণা করলেও সমকামীদের বিবাহের বিষয়টা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও উত্থাপন করেছে।
স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের অধীনে ভারতে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের একত্রে বসবাসের বৈধতা দেয়। এলজিবিটিকিউ দম্পতিরা এই আইনে তাদেরও বৈধ করার দাবি করছে।
আইনের বাঁধা না থাকলেও এলজিবিটিকিউ দম্পতিরা সারা জীবন প্রতিশ্রুতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুস্থানের আয়োজন করে। তারা ভারতীয় ঐতিহ্যগত বিবাহের আচার অনুসরণ করে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিবাহের স্বীকৃতি না থাকায় সমকামী এবং সমকামী দম্পতিদের ভারতীয় সারোগেট মায়ের সাহায্যে সন্তান নেয়ার অনুমতিও নাই। একজন সমকামী ব্যক্তি শুধুমাত্র একক অভিভাবক হিসেবে দত্তক নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় দত্তক পর্যালোচনা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারেন।
"কোন ভেদাভেদ ছাড়াই আমরা অধিকার নিয়ে অন্য সবার মত হওয়ার অপেক্ষায় আছি,”এলজিবিটিকিউ অধিকার কর্মী মোহনীশ মালহোত্রা ডয়চে ভেলেকে জানান।
সমকামী বিবাহের পথে বাধা
এ পর্যন্ত বিশ্বে ৩৩ দেশের সমকামী বিবাহ ও মিলনের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ভারতে সমকামীদের সম্পর্কে সে দেশের মানুষ আগের চেয়ে সচেতন হলেও সমকামী বিবাহের ক্ষেত্রে তাদের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে।
উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার এক বিবৃতিতে সমকামী বিয়েকে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের পরিপন্থী বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলছে, ভারতীয় আইনে সমকামী বিয়েকে অবৈধ বলে গণ্য করা উচিত।
"দুজন মানুষ একসাথে থাকতে আমাদের কোন আপত্তি নেই, কিন্তু সমকামী বিয়ের ইস্যুতে বিচারক হতে পারি না। এ নিয়ে বড় ধরনের সামাজিক বিতর্ক হওয়া উচিত এবং সংসদে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেন।
মুরালি কৃষ্ণান/ একেএ