‘সব অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে'
২ জানুয়ারি ২০১৯জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব জানিয়েছেন, সব অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
ইইউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনে ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে৷ তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার সমালোচনাও করেছে৷ জানিয়েছে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করার আহ্বান৷
নির্বাচনের দিনের সহিংসতার বিষয় উল্লেখ করে তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সামগ্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা ছিল এবং নির্বাচনি প্রচার ও ভোট দেয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে৷''
বিবৃতিতে বলা আরো বলা হয়েছে,‘‘সংশ্লিষ্ট জাতীয় কর্তৃপক্ষকে এখন অনিয়মের অভিযোগগুলো যথাযথভাবে খতিয়ে দেখতে হবে এবং পুরোপুরি স্বচ্ছতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করতে হবে৷''
এদিকে যুক্তরাজ্যের এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণকে আমি স্বাগত জানাই, কিন্তু আমি জানি, নির্বাচনের আগে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল৷ ফলে বিরোধীরা নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারেনি৷ নির্বাচনের দিন কিছু লোক ভোট দিতে পারেনি৷ আমি নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের অভিযোগের স্বচ্ছ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি৷''
প্রচারের সময় ভয়ভীতি দেখানো এবং সহিংসতার নিন্দা জানান মার্ক৷ নির্বাচনের দিন হতাহতের ঘটনায় মার্ক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,‘‘মতবিরোধ নিরসন এবং বাংলাদেশের জণগণের জন্য ভালো এমন কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার এবং বিরোধী দলের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি৷''
আর একাদশ জাতীয় নির্বাচন সফল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের প্রশংসা করলেও নির্বাচন নিয়ে সব ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমশিনকে আহ্বানও জানিয়েছে৷
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আমরা নির্বাচনের আগে হয়রান ও সহিংসতার নির্ভরযোগ্য খবর পেয়েছি৷ বিরোধী দল ও তাদের সমর্থকদের স্বাধীনভাবে সভা, মিছিল ও প্রচার কঠিন হয়ে পড়েছিল৷ নির্বাচনের দিন কিছু অনয়িম ও ভোটারদের ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন৷ এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে৷''
পালাদিনো বলনে, ‘‘বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্র৷ অনেক বাংলাদেশি মার্কিন নাগরকিত্ব পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভবষ্যিৎ ও গণতান্ত্রকি উন্নয়নে আরো বিনিয়োগ করতে চায়৷''
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ)-এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইইউ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী৷ তারা নির্বাচনের এক ধরনের লেজিটিমেসি চায়৷ তারা যে বিষয়গুলো তুলেছেন, উদ্বেগ জানিয়েছেন তা অযথার্থ নয়৷ আমরা জাতীয় পর্যবেক্ষক হিসেবেও বিষয়গুলো দেখেছি। এখন নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে এই অভিযোগগুলো স্বচ্ছতা ও নিপেক্ষতার সাথে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া৷ শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা আবার না ঘটে, সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়াও দরকার৷''
ইইউ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের অনিয়ম, সহিংসতা, ভোটদানে বিরত রাখা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে অভিযোগ তদন্তের যে আহ্বান জানিয়েছে, তা নিয়ে ডয়চে ভেলে'র সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ৷ তিনি বলেন, ‘‘এরই মধ্যে আমরা এসব অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছি৷ বিশেষ করে সহিংসতা ও নিহতের ঘটনা তদন্ত করার জন্য আমরা পুলিশের আইজি মহোদয়কে বলেছি৷ আমরা চিঠিও দিয়েছি৷ আহত এবং নিহত হওয়ার ঘটনার তালিকা করে প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি৷''
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের পরদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ও বলেছেন যে, নির্বাচন সংক্রান্ত সব অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷