সচিবালয়ের ফাইল চুরির তদন্তে দেরি কেন?
১ নভেম্বর ২০২১বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। কিন্তু নথিগুলো চুরির ঘটনা জানা যায় একদিন আগে বুধবার। রোববার থানা পুলিশের সঙ্গে এই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ছয় জন কর্মচারীকে আটক করেছে। রোববারের আগে এই ঘটনার কোনো তদন্তই হয়নি।
সচিবালয়ের মত সুরক্ষিত একটি জায়গা থেকে ফাইল চুরির ঘটনায় বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। ফাইলগুলো ছিলো সচিবালয়ের তিন নাম্বার ভবনের ২৪ নাম্বার কক্ষের একটি তালা দেওয়া কেবিনটে। এই কক্ষটি স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদাৎ হোসেনের কক্ষ সংলগ্ন। ওই কক্ষে বসেন কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার এবং আয়েশা সিদ্দিকা। সিআইডি এই দুইজনসহ মোট ছয়জন কর্মচারীকে আটক করেছে। বাকিরা হলেন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাদল, বারি, মিন্টু ও ফয়সাল। সেখানে কর্মরত ১৩ জনের আঙ্গুলের ছাপও নিয়েছে সিআইডি। তারা অতিরিক্ত সচিব শাহাদাৎ হোসেন ও যুগ্ম সচিব কাজী আনোয়ার হোসেনের কক্ষেরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন।
জানা গেছে ১৭টি ফাইলে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত নথি, নিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয় সংক্রান্ত নথি এবং ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিং ও ক্যান্সার সংক্রান্ত নথি ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, যে কক্ষ থেকে ফাইল চুরি হয়েছে সেই কক্ষটি সিসি ক্যামেরার আওতায় ।
সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে আরো সুরক্ষিত। প্রবেশ পথে তিন স্তরের নিরাপত্তা ছাড়াও প্রত্যেকটি ভবন আলাদাভাবে সিসি ক্যামেরার আওতায়। ভিতরে পুলিশের আলাদা ইউনিট আছে। আর আছে ওয়াচ টাওয়ার।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার জানান,"সিআইডি মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে। আমরাও তদন্ত করছি। জিডি হয়েছে আমাদের থানায়। তদন্ত আমরা এখানো সিআইডির কাছে হস্তান্তর করিনি।”
তিনি বলেন,"সচিবালয় সুরক্ষিত এলাকা বলে আমরা ভিতরের দিকেই নজর দিচিছ। যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা কিছু আলামত এবং তথ্য সংগ্রহ করেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজের জন্য আবেদন করলেও এখনো পাইনি।”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"ফাইলে গোপন কিছু নাই সচিব এমন মন্তব্য করলেও মামলার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা।”
সিআইডির এডিশনাল এসপি আজাদ রহমান জানান,"যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হাতের ছাপসহ আরো যেসব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে তার ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন,"ওই ছয় জনের বাইরে আরো কাউকে প্রয়োজন হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর এখনো মামলা না হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। সব দিক নিশ্চিত হয়ে মামলা করা হবে।”
থানা পুলিশ এখানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ না পেলেও সিআইডি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে বলে জানান তিনি।
তদন্তকারীদের সাথে কথা বলে মোটামুটি বোঝা গেছে যে ফাইল চুরিতে মন্ত্রণালয়ের লোকজনই জড়িত থাকতে পারেন। তবে উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো কিছু তারা জানা যাচ্ছে না। কিন্তু একাধিক সূত্রের ধারণা ওইসব ফাইলে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ থাকতে পারে। তাই কালক্ষেপণ নিয়েও প্রশ্ন উঠৈছে। প্রশ্ন উঠেছে এর মাধ্যমে কাউকে রক্ষা বা আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কী না।
রোববার স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর সংবাদ সম্মেলন করে বলেন,"চুরি যাওয়া ফাইলে গোপন কিছু নাই। ফাইলের তথ্য আমাদের অন্যান্য বিভাগেও আছে, কম্পিউটারে আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও আছে। মূল বিষয় হলো ফাইল মিসিং হওয়া।” এ নিয়ে কথা বলার জন্য বার বার ফোনে চেষ্টা করেও সচিব আলী নূরকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) শাহ আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।