শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মারা রিঙ্কু সিং কে?
১০ এপ্রিল ২০২৩ক্রিকেট মাঠে অসম্ভব বলে কিছু হয় না, সেটা এবার দেখিয়ে দিলেন রিঙ্কু সিং। কেকেআরের এই মারকুটে প্লেয়ার আইপিএলে রেকর্ড করে দলকে ম্যাচ জেতালেন। শেষ পাঁচ বলে জেতার জন্য দরকার ছিল ২৯ রান। পাঁচটা ছক্কা মারলেই তা সম্ভব। রিঙ্কু তাই মারলেন। এই ইনিংস এল গতবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটানসের বিরুদ্ধে।
প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে রিঙ্কুর ব্যাট থেকে এল পাঁচটা ছয়। ক্রিকেটের ২২ গজে এভাবেই তো তৈরি হয় রূপকথা। ম্য়াচ শেষ হওয়ার পর রিঙ্কুকে জড়িয়ে ধরে কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিত কেঁদে ফেলেছিলেন আনন্দে। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের এই য়ুবক তো তারই আবিস্কার।
কে এই রিঙ্কু সিং?
রিঙ্কুর এই ইনিংসের পরই শুরু হয়ে যায় গুগলে খোঁজ। কে এই রিঙ্কু?
আসলে আলিগড়ের একটি এলপিজি বা রান্নার গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চত্বরে দুই ঘরের বাড়িতে তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছেন মানুষ। এটাই রিঙ্কুর বাড়ি। বাবা বাড়ি বাড়ি গ্যাসের সিলিন্ডার পৌঁছে দেন। এক ভাই অটো চালান। আরেক ভাই কাজ করেন কোচিং সেন্টারে।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রিঙ্কু তৃতীয়। কয়েক বছর আগে তার পরিবার পাঁচ লাখ টাকার ঋণ নেয়। কিন্তু তা পরিশোধ করতে কালঘাম ছুটে যায় পরিবারের সদস্যদের। তখন ক্রিকেট ছেড়ে চাকরি করার কথা ভাবেন তিনি।
ভাই একটা জায়গায় নিয়ে যান। তারা বলে, সাফ-সাফাইয়ের কাজ করতে হবে। মানে ঝাড়ুদারের কাজ। বাড়ি ফিরে রিঙ্কু মাকে বলেছিলেন, ওই চাকরি করবেন না, ক্রিকেটেই মনোনিবেশ করবেন। নবম শ্রেণিতে ফেল করে পড়াশুনো ছেড়ে দেয়া রিঙ্কুর কাছে তখন থেকে ক্রিকেটই সব। ভাগ্যিস ক্রিকেট ছাড়েননি তিনি। তাহলে তো এমন ইনিংস দেখতে পেতাম না আমরা।
উত্তরপ্রদেশ অনূর্ধ ১৯ দলে খেলে সামান্য টাকা পেতেন। সেটা দিয়েই দিন চলতো। মুম্বই ইন্ডিয়ানসের সঙ্গে লড়াই করে কেকেআর যখন তাকে ৮০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিল, তখন ঘরে বসে তার মনে হয়েছিল, এবার ঋণ শোধ দেয়া যাবে, বড় ভাই ও বোনের বিয়েও হবে।
রিঙ্কু বলেছেন, আমার বাবা মাসে ছয়-সাত হাজার টাকা রোজগার করে। বড় ভাইও তাই। আমাদের পরিবার একটু বড়। ক্রিকেটে মনোনিবেশ করা ছাড়া আমার কোনো বিকল্প ছিল না। আমায় অনেক লড়াই করতে হয়েছে। তার সুফল পাচ্ছি।
রিঙ্কুর পরিবারের আশা, সে এবার একটা মোটরসাইকেল পেলে, তার বাবা তখন সেটায় চড়ে সিলিন্ডার বিলি করতে পারবেন।
রিঙ্কু বলেছেন, আইপিএলে কেকেআর ৮০ লাখ টাকায় তাকে কেনে, এত অর্থ তার পরিবারে কেউ কখনও দেখেনি।
জিএইচ/এসজি(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পিটিআই)