‘শুনেছি আমার বিরুদ্ধে আরো মামলা হবে'
৮ জুন ২০১৭আর মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেছেন, ‘‘এই মামলা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ৷''
বুধবার সাংবাদিক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে গুলশান থানায় মামলা করেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী৷ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, আফসান চৌধুরী সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে ফেসবুকে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন৷
এদিকে ৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু ফেসবুকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে আফসান চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার চেয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশ প্রধানকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন৷ তবে ওই নোটিশের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি পুলিশ৷
আফসান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এক মাস আগে আমি এক ফেসবুক পোস্টে বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় পিকাসো হোটেলের মালিকের ছেলে জড়িত বলে লিখেছিলাম৷ তখন ফেসবুকসহ সংবাদ মাধ্যমে খবর বের হয় পিকাসো হোটেলের মালিক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী৷ আমি সেই তথ্যের ভিত্তিতেই মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলের কথা লিখেছিলাম৷ তবে পরে জানা যায়, পিকাসো হোটেলের একাধিক মালিকের একজন তিনি৷ এবং ধর্ষণের সঙ্গে যে জড়িত সে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার পোস্টে এ বিষয়গুলো পরে উল্লেখ করেছি৷ তাঁর এবং তাঁর মেয়ের বক্তব্য দিয়েছি৷ তারপরও কেন মামলা হলো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না৷ তবে এখন খবর পাচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে আরো মামলা হবে৷ ক্ষোভ থেকে এসব মামলা হচ্ছে বলে আমার মনে হয়৷''
সিনিয়র এই সাংবাদিক ও শিক্ষক আরো বলেন ,‘ এই আইনটি যে ভালো না তা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বলেছেন৷ এতে বাক-স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়৷ আর রুদ্ধ হলে কী ক্ষতি হয়, তা তারাই বলতে পারবেন৷''
ফেসবুক পোস্টটি যে সঠিক তথ্যভিত্তিক ছিল না– এ বিষয়টি তুলে ধরা হলে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি একা নই অনেকেই তখন এই কথা বলেছেন৷ পোস্ট দিয়েছেন৷ আমি ফেসবুক থেকেই তথ্য পেয়েছি৷ আর আমার উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন, যেন রেহাই না পায়৷ পরে আমার পোস্টে সংশোধিত তথ্যও দিয়েছি৷ এক মাস পরে কেন এই মামলা?''
অন্যদিকে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দেয়া পোস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো ওই পোস্টে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো কটুক্তি করিনি৷ আমি তাঁর প্রশংসা করেছি৷ সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলায় আমি তার প্রশংসা করেছি৷''
তাঁর মতে, ‘‘একজন আইনজীবী সক্রিয় আছে৷ তিনি আমাকে গ্রেপ্তারে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন৷ আবার তিনিই আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদীর আইনজীবী৷''
আফসান চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি৷ শুক্র , শনি দু'দিন ছুটি, তাই আদালতে যেতে পারছি না৷ দেশের আইনে যদি এই মামলা গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে আমার কী বলার আছে৷ পুলিশ যদি গ্রেপ্তার করতে চায়, করবে৷''
এ নিয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার কথা বললেও এই আইনটির অপব্যবহার অব্যাহত আছে৷ কেউ যদি সাংবাদিক আফসান চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টে ক্ষতিগ্রস্ত বা ক্ষুব্ধ হন, তাহলে প্রতিকারের অনেক পথ আছে৷ তাই বলে এই বিতর্কিত আইনে মামলা করতে হবে? এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ৷ এর ফলে মানুষ আর কথা বলার সাহস পাবে না৷''
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কারো পোস্টের কথা যদি তথ্যভিত্তিক না-ও হয়, তা হলেও এই আইনে মামলা করা গ্রহণযোগ্য নয়৷ প্রতিকারের আরো অনেক পথ আছে৷ মামলা মোকদ্দমা ক্ষোভ প্রশমনের একমাত্র পথ নয়৷''
নূর খান বলেন, ‘‘আফসান চৌধুরী তাঁর পোস্ট সংশোধন করেছিলেন৷ যাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ দাবিদার, তাঁদের কথাও পোস্টে প্রকাশ করেছেন৷ তারপরও এই মামলা হওয়ার মানে হলো কোনো দুরভিসন্ধি আছে৷''
এদিকে আদালত এই মামলায় গুলশান থানাকে আগামী ২৩ জুলই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দিয়েছে৷