1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শীতে কি বাড়বে করোনা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩১ অক্টোবর ২০২০

শীতের আগমনের সঙ্গে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা৷ তাপমাত্রা ওঠানামার সাথে  ভাইরাসের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও নানা কারণে বাড়তে পারে সংক্রমণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷

https://p.dw.com/p/3kh1d
Indien Smog und Nebel in kalkutta
ফাইল ছবিছবি: DW/S. Bandopadhyay

কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা৷ গভীর রাত ও সকালের দিকে ঠান্ডা আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে৷ শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে, করোনা কি আরও বাড়বে?

দুর্গাপুজোর সময়ে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল৷ আপাতত তা চার হাজারের নীচে নামলেও স্বস্তি নেই৷ শারদীয় উৎসবের জেরে সংক্রমণ কতটা বাড়বে, তা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরা৷ এরই মধ্যে তাপমাত্রা কমায় বাড়তি উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে৷

করোনার ভ্যাকসিন এখনো বাজারে আসেনি৷ পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে বিশ্বজুড়ে৷ ফলে সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই৷ এ পরিস্থিতিতে শীতকাল কতটা উদ্বেগের হয়ে উঠতে পারে?

তাপমাত্রা কমার সাথে সংক্রমণ বৃদ্ধিকে যৌক্তিক মনে করেন না কলকাতার চিকিৎসক কুণাল সরকার৷

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে তাপমাত্রা কমলেও আলাদা কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই৷ শীত বেশি পড়লে করোনা অনেক বেড়ে যাবে, এটা ভাবার পিছনে যুক্তি নেই৷ আমাদের দেশে শীতকালে শহরগুলোতে দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়৷ ফলে শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের সমস্যা হয়৷ করোনার সঙ্গে এটা বাড়তি ফ্যাক্টর হতে পারে৷''

‘তাপমাত্রা কমলেও আলাদা কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই’

অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিয়ে ডা. সরকার বলেন, ‘‘ইউরোপ-অ্যামেরিকায় ঠান্ডার সময় মানুষ ঘরে থাকতে পছন্দ করে৷ ফলে একজন সংক্রমিত হলে দ্রুত অন্যজনের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে৷ কিন্তু আমাদের দেশে শীতে মানুষ রোদ পাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়৷ তাই অনেকে মিলে একসঙ্গে থাকার সময়টা কমে আসে৷ যে কারণে, সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে না৷''

তবে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার শীতকালের বদ্ধ অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘শীতকালে ঠান্ডা আটকাতে সব বন্ধ করে রাখার একটা প্রবণতা থাকে৷ সেটা বাড়িতে যেমন, গণপরিবহণেও তেমন৷ তাই এই বদ্ধ অবস্থায় একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে৷''

অধ্যাপক জোয়ারদার বলেন, ‘‘তাপমাত্রা ওঠানামার সঙ্গে ভাইরাসের বাঁচা-মরার সম্পর্ক নেই৷ সম্পর্ক রয়েছে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে৷ অর্থাৎ, শীতকালে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে, ভাইরাস আরো শক্তিশালী হবে, এই ধারণা ঠিক নয়৷''

‘বদ্ধ অবস্থায় সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি’

তিনি বলেন, ‘‘শীতকালে বাতাস শুকনো থাকার ফলে ড্রপলেট তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু মেঘলা আবহাওয়া বা শিশির পড়ার ফলে বাতাসে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থাকতে পারে৷ এতে ড্রপলেটের মধ্যে থাকা ভাইরাসের আয়ু বেড়ে যায়৷ ভাইরাস যত বেশি বেঁচে থাকে, সংক্রমণের আশঙ্কা ততই বাড়ে৷''

সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বারবার হাত ধোয়া বা পরিচ্ছন্ন থাকার কথা বলা হচ্ছে৷ শরীর ও জামাকাপড় নিয়মিতপরিষ্কার করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু তাপমাত্রা কমলে বারবার স্নান করা বা ঘন ঘন কাপড় ধোয়ার প্রবণতা কমবে৷ ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়তে পারে৷ এছাড়া শীতে রোদ কম থাকলে শরীরে ভিটামিন ‘ডি'-এর জোগান কমে যায়৷ফলে কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷

দুর্গা পূজার সময়ে জনসমাগমের প্রভাব কী হতে পারে তা জানার জন্য নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে৷ তখন তাপমাত্রা আরো কমবে৷ পশ্চিমবঙ্গে আগের চেয়ে সংক্রমণ বাড়ায় আপাতত সেই পুরোনো পদ্ধতির উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা৷

কুণাল সরকারের মতে, আরো বেশি বাড়াতে হবে পরীক্ষার সংখ্যা৷ বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব৷ পরতে হবে মাস্ক৷

কিন্তু ইদানীং এসব নিয়ম উপেক্ষা করার যে প্রবণতা রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে তার পরিণতি ভেবে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা৷ তারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা সেবার চূড়ান্ত ব্যবহার হয়ে গিয়েছে৷ নতুন করে রোগীর ঢেউ সামলানোর ক্ষমতা নেই৷ তাই শীত এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে করোনা ঘিরে কুয়াশা যেন আরো বাড়ছে৷