করোনা সংকটেও উৎসব ঘিরে জনসংযোগের চেষ্টা
১৫ অক্টোবর ২০২০কোভিড সংক্রমণ হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ এরই মধ্যে এসে গিয়েছে এই বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো৷ প্রতি বছরই শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা উৎসবকে জনসংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন৷ তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়করা বড় বাজেটের পুজোর আয়োজন করেন৷ এবার সবকিছুর উপর প্রশ্নচিহ্ন ছিল৷ যদিও পুজোর দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তৎপরতা দ্রুত গতিতে বেড়েছে রাজনৈতিক দলগুলির৷
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার অতীতেও পুজো উদ্যোক্তাদের অনুদান দিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, রাজ্যের প্রায় ৩৫ হাজার পুজো কমিটিকে দ্বিগুণ অনুদান দেওয়া হবে৷ অর্থাৎ, গত বছর ছিল ২৫ হাজার টাকা, এবার তা বেড়ে হবে ৫০ হাজার৷ গত বছর উদ্যোক্তারা বিদ্যুতের বিল ২৫ শতাংশ ছাড় পেয়েছিলেন, এবার সেটাও বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে৷ এছাড়া পুজোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে যে টাকা দিতে হয়, সেটা মকুব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর বক্তব্য, করোনা ও লকডাউনের ফলে পুজো করার আর্থিক সঙ্গতি নেই অনেকের৷ তাই অনুদান বাড়ানো হয়েছে৷
তৃণমূল নেতারা বলছেন, উৎসব ঘিরে কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়, বহু মানুষের সারা বছরের মূল উপার্জন হয় এই মরশুমে৷ মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের ফলে সেই বাজার চাঙ্গা হবে৷ পুজোর উপহার হিসেবে অন্যান্য ঘোষণাও রয়েছে, যা এই সঙ্কটে মানুষকে মেতে ওঠারই বার্তা দিচ্ছে কার্যত৷ কলকাতার রাস্তায় ডাবল ডেকার বাস ফিরেছে৷ দর্শনার্থীরা শহর ভ্রমণের জন্য এই বাসে চড়তে পারবেন৷ লোকশিল্পের প্রচারও হবে এই যানের মাধ্যমে৷ পুজোতেই শুরু হচ্ছে এর অনলাইন বুকিং৷
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হাতছাড়া করতে চাইছে না শাসক-বিরোধীরা৷ করোনাও তাদের বিরত করতে পারেনি৷ রাজ্য বিজেপি তৃণমূলের থেকে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছে৷ নজিরবিহীন ভাবে তারাই প্রথম রাজনৈতিক দল যারা নিজেদের ব্যানারে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছে৷ সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে প্রথম বছরের পুজো অনুষ্ঠিত হবে৷ ষষ্ঠীতে ভার্চুয়ালি এই পুজো উদ্বোধন করে বাংলার মানুষকে বার্তা দেবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে শাসকদল উৎসবের আয়োজন থেকে তাঁদের দূরে রাখতে চায়৷ এর প্রতিকারে করতে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে৷ বিজেপি নেত্রী তনুজা চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা উৎসব নয়, পুজোর আয়োজন করেছি৷ সরকারি নিয়ম মেনে কোভিড পরিস্থিতিতে পুজো হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী পুজো নিয়ে যেটা করেছেন, তা দান-খয়রাতি৷ রাজ্যের যুবসমাজ এই কৌশল বুঝতে পেরেছে বলেই গত লোকসভা ভোটে বিজেপি সাফল্য পেয়েছে৷''
এই চাপানউতোরের মধ্যে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলার৷ বাম নেতার দায়ের করা এই মামলায় পুজোয় সরকারি অনুদান ও করোনার সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে৷ শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, দুর্গাপুজোর মতো অন্য উৎসবেও অনুদান দেওয়া হয় কি না৷ সংক্রমণ রুখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে বন্ধ, সেখানে পুজোর অনুমতি কীভাবে দেওয়া হল? উৎসবের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণে কী পরিকল্পনা রয়েছে, তাও রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছে আদালত৷
রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের গতিবিধির নেপথ্যে নিখাদ রাজনীতিই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা৷ অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এবার পুজো যতটা সংক্ষিপ্ত করা যেতো, ভালো হতো৷ কিন্তু উৎসবকে ঘিরে জনসংযোগের উদ্যোগ দেখে তা মনে হচ্ছে না৷ এর ফলশ্রুতি বিপজ্জনক হতে পারে৷'' এই আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা৷ তাঁরা সরকারকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, পুজোয় মেতে উঠলে উৎসবের পর করোনা সুনামির আকার নিতে পারে৷ মহারাষ্ট্রে গণেশ পুজোর আয়োজন সীমিত হলেও সেখানে সংক্রমণ বেড়েছে৷ কেরল ওনাম উৎসবে মেতে ওঠার পর সেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা বোঝা যাবে আগামী মাসে৷