ভারতে শিশুপাচার ও যৌন উৎপীড়ন
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭এ দেশে শিশুদের ওপর যৌন উৎপীড়নের ঘটনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌন উৎপীড়নের শিকার হওয়া শিশুটি উৎপীড়কের পূর্বপরিচিত৷ বাড়ির বাইরে যে জায়গা বাচ্চাদের জন্যে সবচেয়ে নিরাপদ হওয়ার কথা, আজ সেটাই হয়ে উঠেছে ভয়ের আস্তানা৷ স্কুলে পড়ুয়াদের যৌন হেনস্থা থেকে শুরু করে খুনের ঘটনা এখন প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে৷ ২০১৫ সালে মোট ১০,৮৫৪টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে৷ বলাই বাহুল্য, প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা এর আরও কয়েক গুণ বেশি৷
২০১৬ সালে ভারত থেকে ৯০০০টি শিশু পাচারের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, যা তার আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি৷ এক্ষেত্রেও প্রকৃত সংখ্যাটা অনেক বেশিই হবে৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাচার হওয়া ও যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া শিশুদের অধিকাংশই প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা৷ ভালো কর্মসংস্থানের লোভ দেখিয়ে তাদের শহরে এনে বিক্রি করে দেয় শিশু পাচারকারীরা৷ এদের অনেককে শহরের ছোটখাটো দোকান, কারখানা অথবা বড়সড় শিল্পের আশেপাশে শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হয়৷ কাউকে আবার বিদেশে পাচার করা হয়৷ এছাড়া শিশুকন্যাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় পতিতালয়ে৷ অনেকক্ষেত্রেই এদের কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না৷ একপ্রকার বন্দি করে রাখা হয়৷ ভারতের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো'-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রায় ১৫,০০০ শিশু ধর্ষণ-সহ যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেশি৷
দেশের বিভিন্ন স্কুলে শিশুহত্যার ঘটনা চলছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এতে উদ্বিগ্ন নোবেলজয়ী সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থী৷ রাজনীতিকদের স্কুলে ফিরে যেতে আর্জি জানিয়েছেন তিনি৷ দেশ জুড়ে শিশুদের ধর্ষণ ও যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর কন্যাকুমারীতে তিন বছর ব্যাপী ‘ভারত যাত্রা মিছিল'-এর সূত্রপাত করেন তিনি৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও ছ'টি যাত্রা বের হবে৷ প্রতিটি দল ১৬ অক্টোবর দিল্লিতে মিলিত হবে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্দোলনের আকার নিতে চলেছে এই র্যালি৷ ২২টি রাজ্য জুড়ে মোট ১১,০০০ কিলোমিটারের পদযাত্রা, এর আগে কখনও হয়নি৷
১৯৮০ সালে ‘বচপন বাঁচাও আন্দলন'-এর সূত্রপাত ঘটান কৈলাশ সত্যার্থী৷ ২০১৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ এ পর্যন্ত ৮০,০০০ শিশুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন সত্যার্থী৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সত্যার্থী জানান, ‘‘শিশুদের ওপর যাবতীয় অন্যায়ের ঘটনায় বহুক্ষেত্রে বিচার পেতে দেরি হওয়া, অভিযুক্ত ছাড়া পেয়ে যাওয়া এবং বিচারে বিলম্ব লক্ষ্য করা যায়৷ দেশে শিশুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার মাত্র ৪ শতাংশ মামলায় অভিযুক্তরা শাস্তি হয়েছে৷ এবং ৬ শতাংশ মামলায় অভিযুক্ত মুক্তি পেয়েছে৷ বাকি ৯০ শতাংশ মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে৷'' তাঁর কথায়, ‘‘এর সমাধানে দেশে শিশুবান্ধব বিচারব্যবস্থা প্রয়োজন৷''
যে ঘটনা নিয়ে এখন গোটা ভারত উত্তাল, সেই ঘটনায় রহস্য ক্রমেই ঘনাচ্ছে৷ গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রদ্যুম্নের গলা কাটা দেহ মিলেছিল স্কুলেরই শৌচাগার থেকে৷ শিশুটিকে খুনের অভিযোগে সে দিন বিকেলেই গ্রেপ্তার করা হয় ওই স্কুলের এক বাসের খালাসি অশোক কুমারকে৷ গুরুগ্রামের ওই স্কুলে সাত বছরের শিশুর খুনের ঘটনায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা৷ ভয়ংকর এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে এবার নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র সরকার৷ স্কুলে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা আরও কঠিন করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র৷ শিশু অধিকার সংস্থা এবং সিবিএসই-র মতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে দ্রুত নিরাপত্তা বিষয়ক গাইডলাইন কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
শিশুর ওপর যৌন উৎপীড়নের বহু ঘটনা প্রতিদিন সামনে আসছে৷ তার মধ্যে একটি হলো, স্কুল ছুটির পর ‘চেনা কাকু'-র ডাকে ছোট্ট মেয়েটি গিয়েছিল টয়লেটে৷
সেখানেই তাকে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফলে চলে যায় অভিযুক্ত৷ ওই অবস্থায় বাড়ি ফেরার পর গোপনাঙ্গ থেকে রক্ত বেরচ্ছে দেখে তাকে প্রশ্ন করতেই সব বলে মেয়েটি৷ তৎক্ষণাত্ মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তার অভিভাবক৷ খবর দেওয়া হয় পুলিশেও৷ ঘটনাটি ঘটেছে গত কাল শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে, দিল্লির একটি বেসরকারি স্কুলে৷ অভিযুক্ত স্কুলটির পিওন হিসেবে কর্মরত ছিল৷
ঘটনার শেষ নেই৷ ইউনিফর্ম ভেজা থাকায় সাধারণ পোশাকে স্কুলে গিয়েছিল ক্লাস-ফাইভের এক ছাত্রী৷ ডায়েরিতে তা লিখেও দিয়েছিলেন অভিভাবক৷ কিন্তু তাতে কী? শিক্ষককে তো শাস্তি দিতে হবে! তবে এমন শাস্তি সত্যিই কুরুচিকর, লজ্জাজনক৷ ১১ বছরের মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হল পুরুষদের শৌচাগারে৷ হায়দ্রাবাদের একটি বেসরকারি স্কুলে ঘটেছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি৷
বন্ধু, শিশু নিপীড়নকারীর কী শাস্তি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷