শিশুদের যৌন নিগ্রহ
৩ নভেম্বর ২০১৫দেশ জুড়ে বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের ওপর যৌন অত্যাচারের ঘটনা যেভাবে বাড়ছে, তা দমনে অভিযুক্তদের বাড়তি শাস্তি দিতে তাদের লিঙ্গচ্ছেদের সুপারিশ করেছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট৷ এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে হাইস্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানসম্মত যৌনশিক্ষাদান বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে৷ আদালত মনে করে, এই শাস্তি বর্বরোচিত হলেও বর্বরোচিত অপরাধের শাস্তি এমনটাই হওয়া দরকার৷ গতানুগতিক আইন যখন এই ধরণের অপরাধ দমন করতে পারছে না, তখন আদালতকে অতিরিক্ত শাস্তির সংস্থান রাখতে হচ্ছে৷ আদালত আরো জানায়, গত ৫-৬ বছরে শিশুদের ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের হার ৪০০ শতাংশ বেড়েছে৷ আর শাস্তি হয়েছে আড়াই শতাংশের কম৷ কেন কম? সেটা অন্য প্রশ্ন৷ তবে এই শাস্তির বিধান স্রেফ ভারতেই নয়, অন্য অনেক দেশেই বৈধ৷
কী প্রসঙ্গে আদালতের এই সুপারিশ? ভারতের দক্ষিণি রাজ্য তামিলনাড়ুর এক ১৪ বছরের কিশোরের ওপর যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত এক ব্রিটিশ নাগরিক তাঁর বিরুদ্ধে আনীত মামলা খারিজ করার আর্জি নিয়ে আদালতে গেলে, মামলার শুনানিকালে বিচারক এই সুপারিশ করেন৷ বলা হয়, ঐ কিশোরের পড়াশুনার ভার বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঐ ব্রিটিশ নাগরিক ২০১১ সালে ছেলেটিকে দিল্লিতে নিয়ে এসে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায় – অভিযোগ এমনটাই৷ এছাড়া সপ্তাহ খানেক আগেও দিল্লির বস্তি এলাকায় আড়াই ও পাঁচ বছরের দুই শিশুর ধর্ষণের খবর নিয়ে মিডিয়াতে শোরগোল পড়ে যায়৷
কিন্ত লিঙ্গচ্ছেদের মতো শাস্তি এই অপরাধ দমনে কতটা সফল হবে তাই নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা, নারী সংগঠন এবং নাগরিক সমাজে আড়াআড়িভাবে বিভাজিত৷ মনস্তত্ত্ববিদ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বি. কে রায় মনে করেন, কড়া শাস্তি দিলেই যদি অপরাধ দমন করা যেত, তাহলে যে অপরাধে ফাঁসির শাস্তি হচ্ছে, সেই অপরাধ বন্ধ করা যেত৷ কিন্তু তা কি হয়েছে? হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় এক কিশোরীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি নামে এক ব্যক্তির ফাঁসির সাজা হয়৷ তারপর কি ধর্ষণ কমে গেছে? কমেনি৷ কাজেই লিঙ্গচ্ছেদের শাস্তিতে ইতরবিশেষ কিছু হবার নয়৷ এটা মানুষের আদিম রিপুর অদম্য তাড়না৷'' তিনি জানান, হরমোনজনিত কারণে তা কখনো কখনো বিকৃত রূপ নেয়৷ এমনকি শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও তা বিরল নয়৷
তবে আদালতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, আসল সমাধান স্কুল-স্তরের পাঠ্যসূচিতে বিজ্ঞানসম্মত যৌন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা৷ আরও জরুরি হলো মা-বাবা ও অভিভাবকদের এ বিষয়ে বাচ্চাদের সচেতন রাখা এবং নিজেদের সাবধান থাকা৷ সব থেকে বড় দুর্ভাগ্য, এই সব জঘন্য ঘটনায় বেশিরভাগ জড়িত পরিবারের আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশী৷ শিশুদের যৌন নিপীড়নের যত অভিযোগ আদালত পর্যন্ত যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু বাড়ির লোকজন তা চেপে যায় লোকলজ্জার ভয়ে৷ একটা শিশুর সুকুমার মনের ওপর তার যে প্রভাব পড়ে, সেদিকে ততটা নজর দেয়া হয় না, বলেন অধ্যাপক রায়৷
এক বিশিষ্ট আইনজীবী গীতা রামাশেষনের মতে, লিঙ্গচ্ছেদের মত শাস্তি মানর দেহকে বিকৃত করা, সেটা মেনে নেয়া যায় না৷ পাশাপাশি নারীবাদী সংস্থাগুলির সঙ্গে সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে কড়া শাস্তির বিধান থাকা উচিত৷ বাচ্চাদের ওপর যৌন নিপীড়নের অপরাধ করার আগে ঐ ব্যক্তিকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করবে৷