শিশু আয়াত হত্যা:আবীরকে আদালত চত্বরে উত্তেজনা, ৭দিনের রিমান্ড
২৮ নভেম্বর ২০২২সোমবার শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আবদুল হালিম এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷
গত ১৪ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার৷ শিশুটির সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়৷ আয়াতের দাদা সন্ধান চেয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করলে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৯ বছরের আবীরকে আটক করে৷
আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ি এলাকার সোহেল রানার মেয়ে৷ তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকে আবীরের পরিবার৷
গত শুক্রবার পিবিআই জানিয়েছিল, ‘মুক্তিপণের' জন্যই আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেছে তাদের ভাড়াটিয়ার ১৯ বছর বয়সি ছেলে আবীর আলী৷ পরে ওইদিন রাতে আয়াতের বাবা নগরীর ইপিজেড থানায় একটি হত্যা মামলা করেন৷
পিবিআই জানায়, ১৪ নভেম্বর বিকালে আরবি পড়তে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে বের হয় আয়াত৷ বাসার গলিতেই আবীর তাকে কোলে নিয়েছিল, যা স্থানীয় শিশুরা দেখেছে৷ আশেপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে এবং স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেশী আবীরকে আটক করা হয় ৷
গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিশু আয়াতের হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দেন আবীর৷ তার জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে সে৷
আবীর আলীকে নিয়ে শুক্রবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আলামত উদ্ধার করে পিবিআই৷ তবে সাগরের পানিতে ‘লাশ ভেসে যাওয়ায়' শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা যায়নি ৷
দুইদিন হেফাজতের পর রবিবার আবীরকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দশদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল পিবিআই৷
আদালতে বাদিপক্ষের আইনজীবী সেলিম উল্যাহ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন, তবে আবীরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না৷ এর আগে শনিবার পিবিআইয়ের আবদনের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবীরকে দুদিনের জন্য পুলিশের হেফাজতে পাঠিয়েছিল আদালত৷
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মনোজ দে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে আবীর বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে, সেগুলো আমরা যাচাই করছি৷ আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করেছিলাম৷’’
এদিকে আবীরকে এদিন আদালতে নেওয়ার খবরে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন শ'খানেক মানুষ৷ আবীরকে দেখে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ আয়াতকে হত্যার জন্য তারা আবীরকে লক্ষ্য করে চিৎকার করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মারতেও যান৷ শুনানি শেষে আবীরকে আদালত থেকে বের করার সময়ও মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল৷ পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়৷
বাদীপক্ষের আইনজীবী সেলিম উল্যাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘আদালত কক্ষে আনার সময় এবং শুনানি শেষে চলে যাওয়ার সময় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধরের চেষ্টা করেছিল৷ তবে আতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত থাকায় কিছু করতে পারেনি৷’’
উত্তেজনা থাকলেও ‘তেমন কিছু ঘটেনি' মন্তব্য করে পরিদর্শক মনোজ দে বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে আবেগ আছে৷ তাই তাকে দেখে হয়ত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল৷ আমরা আমাদের মত করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি৷’’
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে শিশু হত্যার ঘটনাটি নিয়ে আবেগ আছে৷ তাই হয়ত রিঅ্যাকশন দেখিয়েছে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে৷’’
এনএস/জেডএইচ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)