শিশু আরাফ হত্যাকারীদের ফাঁসি চান মা-বাবা
২৯ মার্চ ২০২২বিচার প্রক্রিয়া শেষে আগামী ৩০ মার্চ বুধবার আরাফ হত্যা মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন৷
আবদুল কাইয়ুম ও ফারহানা ইসলাম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল আরাফ, বয়স মাত্র ২ বছর ৭ দিন৷ ছেলে হারানো মা-বাবার দাবি, সন্তান হারানোর এমন কষ্ট যেন আর কাউকে পেতে না হয়৷ "আমরা চাই খুনিদের ফাঁসি হোক৷ যাতে আর কোনো মা-বাবার বুক যাতে খালি না হয়৷”
এ মামলার তিন আসামি নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরের বাসিন্দা মো. ফরিদ, শিশু আরাফের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেই ভবনের দারোয়ান মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগম৷ এদের মধ্যে ফরিদ ও নাজমা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন৷ হাসান উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, "আমাদের পক্ষে ২০ জন সাক্ষী দিয়েছেন৷ আসামি পক্ষে ১০ জনের সাফাই সাক্ষ্য হয়েছে৷ আদালত ৩০ মার্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন৷ সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা হত্যার অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি৷ আদালতে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজাই প্রার্থনা করেছি৷ "
এটা একটা ‘সামাজিক অপরাধ' মন্তব্য করে তিনি বলেন, "একজন শিশু যদি ঘরের সামনে নিরাপদ না থাকে তাহলে সমাজে কারও শিশুই তো নিরাপত্তা পাবে না৷ আশাকরি সর্বোচ্চ সাজাই হবে৷" মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিন আসামি৷
বাড়িওয়ালাকে মামলায় ফাঁসাতে হত্যাকাণ্ড?
আরাফের বাবা একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, " ২০২০ সালের ৬ জুন ঘটনার দিন বিকেলে আমার স্ত্রী ছেলেকে ঘরের সামনের পার্কিংয়ে চানাচুর খাওয়াচ্ছিল৷ চানাচুর খাওয়ার পর ছেলে পানি খেতে চায়৷ পানি আনতে ওর মা ঘরের ভেতর যায়৷ ফিরে এসে দেখে সেখানে ছেলে নেই৷”
হত্যার পর ভবনটির বাসিন্দা নাজমা বেগম, তার ছেলে বাড়ির দারোয়ান হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
তখন নাজমা বেগম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশির শিশুকে আদর করার ছলে ঘটনার দিন বিকালে ভবনের ছাদে নিয়ে গিয়ে পানির টাংকিতে ফেলে হত্যা করা হয়৷ নাজমা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে৷এ ঘটনার সময় নাজমার ছেলে ভবনটির দারোয়ান মো. হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন৷
১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ভবনটির মালিক৷ তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে' ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার প্রলোভন দেয় ফরিদ৷
ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন৷ ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারণায় হামলায় ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়৷ একারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন ফরিদ৷
আরাফের মা ছেলেকে খোঁজেন
আরাফের বাবা আবদুল কাইয়ুম কান্নায় ভেঙে পরে বলেন, "আমার সন্তান তো নিষ্পাপ ৷ সে এসবের কিছুই জানত না ৷ আমার একটাই সন্তান ছিল, বড় আদরের ৷ এভাবে ঘরের সামনে থেকে নিয়ে নিদোর্ষ শিশুকে কেন খুন করা হল? চাঁদপুরের হাজিগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল কাইয়ুম চট্টগ্রামে আসেন ৮ বছর আগে৷ তিনি বলেন, "নাতির শোকে আমার বাবা গত অক্টোবরে মারা গেছে৷ আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে৷ আমার স্ত্রী সারাদিন শুধু ছেলের কথা বলে৷
আরাফের মা গৃহিনী ফারহানা ইসলাম বলেন, "আমার তো ওই একটাই ছেলে ছিল৷ আমার ছেলেকে কেন মরতে হল? খুনিদের ফাঁসি চাই৷”
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)