শিল্পী মাইকেল জ্যাকসন
২৬ জুন ২০০৯‘‘স্টার'' খুঁজছে যারা, তারা দেখবে স্টেজে এবং ভিডিও'য় জ্যাকসনের মূর্তি৷ সেই সঙ্গে তার উদ্ভট সাজপোষাক, আচার-ব্যবহার, সুবিশাল সব শো৷ নেভারল্যান্ড এবং পিটার প্যান৷ আধুনিক পপ কিংবদন্তীর সব উপাদানই জুগিয়ে দিয়ে গেছেন মাইকেল৷ কোনো গ্রীক ট্র্যাজেডীর ওয়াল্ট ডিজনী কিংবা মিকি মাউস সংস্করণ৷ কিন্তু গান-বাজনার জগতের মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন: তারা বলবে ‘বিলি জীন'-এর গিটার রিফ'টার কথা৷ বলবে, মাইকেলের গানে যেন বীট'কে চোখে দেখা যায়৷ এই সদ্য চলে যাওয়া শিল্পীটি যে তার যুগের সবচেয়ে সৃজনীশীল সিংগার-সংরাইটারদের মধ্যে একজন, সে-বিষয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না৷
নয়তো ট্র্যাজেডীর হিসেবে কেউ তাকে ফেলছে এলভিস প্রেসলি, মেরিলিন মনরো এবং জেমস ডীনের পর্যায়ে৷ চিত্রপরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ তাকে ফেলছেন – অরিজিনালিটি বা মৌলিকতার বিচারে - ফ্রেড এ্যাস্টেয়ার, চাক বেরি কিংবা এলভিসের পর্যায়ে৷ সোনি মিউজিকের প্রাক্তন প্রধান টমি মোটোলা'র চোখে আবার সিনাট্রা, এলভিস, মাইকেল মিলে পপ আইকনদের এক চিরকালের ত্রয়ী৷
চাঁদের গায়ে হাঁটা
কিন্তু মাইকেলের সুবিখ্যাত মুনওয়াকের ইতিহাসটা পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে, কতো গভীর সাংস্কৃতিক শিকড় এবং উপলব্ধি থেকে উঠে এসেছে এই নাচের ভঙ্গিমাটি৷ মার্সেল মার্সো ছিলেন এক ফরাসী মাইম বা মূকাভিনেতা৷ বিশ্বজোড়া নাম কিনে ২০০৭ সালে বিদায় নেন ৮৪ বছর বয়সে৷ এই মার্সো ছিলেন মাইকেলের সপ্রশংস অনুরাগী, যেমন মাইকেল ছিলেন মার্সোর সপ্রশংস অনুরাগী৷ মার্সো আমেরিকায় বহু প্রোগ্রাম করতেন এবং মাইকেল ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই সে'সব প্রোগ্রাম দেখতে যেতো৷
মাইকেল তার পিছন দিকে হাঁটার মুনওয়াক প্রথম দেখায় ১৯৮৩ সালে টেলিভিশনে ‘বিলি জীন' গাইতে গিয়ে৷ কিন্তু পরে নাকি মাইকেল মার্সোকে কোনো এক সময়ে – ব্যাকস্টেজে – বলেছিল যে তার মুনওয়াকের প্রেরণা হল মার্সোর ‘ওয়াকিং এগেনস্ট দ্য উইন্ড' অথবা ‘বাতাসের বিরুদ্ধে হাঁটা'৷ মাধ্যাকর্ষণকে নস্যাৎ করে মার্সোর সেই হাঁটা মাইকেলকে মুগ্ধ করেছিল৷
বস্তুত মাইকেল এবং মার্সো একটি যুগ্ম মূকাভিনয়ের ফিল্মও করেছিলেন, যদিও প্রকল্পটা তার বেশী আর এগোয়নি৷
ওদিকে মাইকেল পরে একাধিকবার ব্যাখ্যা করেছে যে এই সামনে যাওয়ার ভঙ্গিতে পেছন দিকে যাওয়াটা নাকি আবিষ্কার করে হারলেমের ছেলেমেয়েরা, সত্তরের দশকের শেষে অথবা আশীর দশকের গোড়ায়৷
সাদা-কালো
মাইকেলের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হয়তো হবে যে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে জন্মে শুধু শ্বেতাঙ্গ নয়, শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের মতো অবয়ব কামনা করেছিলেন৷ অর্থাৎ তাঁর মুখের ধাঁচ এবং গায়ের রং বদলানোর পিছনে কাজ করছে এক চরম হীনমন্যতা৷ কিন্তু খোদ ভ্যাটিকানের কাগজ ‘‘অস্সারভাতোরে রোমানা'' এবার লিখেছে যে জ্যাকসন তার বিভিন্ন প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে কোনো জাতিগত নয়, বরং একটি ব্যক্তিগত নূতন সংজ্ঞা খুঁজছিল৷ পত্রিকাটি লিখছে যে মাইকেল শুধু শ্বেতাঙ্গ হতে চায়নি, সে চেয়েছিল সব সীমানা ছাড়িয়ে যেতে, এমনকি জাতি ও বর্ণ যে ধরণের সীমানা আরোপ করে, সেগুলিকেও৷
মজার কথা, ফরাসী ইলেকট্রনিক মিউজিকের পথিকৃৎ জাঁ-মিশেল জারে'ও একই কথা বলেছেন৷ বলেছেন যে সব বড়ো মার্কিন সঙ্গীতশিল্পীরাই কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গ সঙ্গীতের মধ্যে এই যোগাযোগটি সৃষ্টি করেছেন৷ এবং মাইকেল ঐ ‘বর্ণ পরিবর্তনের' জন্য পাগল ছিল, যেমন শারীরিকভাবে, তেমনই সঙ্গীতের আঙ্গিকে৷
জ্যাকসন ফাইভের সোল, ডিসকো এবং মোটাউন ফাংকের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ পপ এবং রক সঙ্গীতের উপাদান মিশিয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন সাউন্ড তৈরী করেন যে জাদু রসায়নবিদ, তাঁরই নাম মাইকেল জ্যাকসন৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী; সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম