1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ক্লাসে ফিরবেন কবে?

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ এপ্রিল ২০২২

জামিন পেয়েছেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দ্রুতই স্কুলে যোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তাকে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারণে ভরসা পাচ্ছেন না হৃদয় মণ্ডল।

https://p.dw.com/p/49mxe
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে দেয়া বক্তব্যের কারণে হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা জানাজানির পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে দেয়া বক্তব্যের কারণে হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা জানাজানির পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ছবি: bdnews24

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। ২২ বছর ধরে ওই স্কুলে বিজ্ঞান ও গণিত পড়িয়ে আসছেন। গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির এক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানের পার্থক্য বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। কয়েক শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে তার বক্তব্য রেকর্ড করে। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হলে শুরু হয় আলোচনা। পরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় একদল লোক বিক্ষোভও করে এলাকায়। তখন পুলিশ গিয়ে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হৃদয় মণ্ডলকে তার বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায়।  

গ্রেপ্তারের ১৯ দিনের মাথায় রবিবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। সোমবার ডয়চে ভেলেকে হৃদয় মণ্ডল জানান, ‘‘আজকেই প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি দ্রুত স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু মুন্সীগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ আমাকে জানিয়েছেন, পুলিশ সুপার দুই-একদিনের মধ্যে সবাইকে নিয়ে বসবেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে আমাকে সেখানে যেতে বলেছেন। সে কারণে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। দ্রুতই স্কুলে যোগ দিতে চাই, শিক্ষার্থীদের পড়াতে চাই।’’

‘‘দ্রুতই স্কুলে যোগ দিতে চাই, শিক্ষার্থীদের পড়াতে চাই’’

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এখন দেশের বাইরে আছেন। দু-এক দিনের মধ্যে তিনি চলে আসবেন। এসপি সাহেব বলেছেন, সবাই মিলে একটা বৈঠকের পর তিনি (হৃদয় মণ্ডল) এলেই ভালো। আমরাও চাইছি যেন উনি ফেরার পর নতুন করে কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হয়।’’ একই কথা বলেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা বারের সভাপতি ও হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী অজয় কুমার চক্রবর্তী। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। আশা করি, নতুন করে আর কোনো সংকট হবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে তিনি যে কোনো দিন স্কুলে যোগ দিতে পারেন। সেই আলোচনা চলছে।’’

মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ কতদূর?

গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে দেয়া বক্তব্যের কারণে হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা জানাজানির পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ ছড়িয়ে দেয়া অডিও রেকর্ডে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলার মতো কিছু পাওয়া যায়নি৷ তাই তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি ওঠে শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহল থেকে৷

পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হৃদয় মণ্ডলকে ‘‘ফাঁসানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে’’ একটি মহল৷ তবে সেই মামলা প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। অবশ্য হৃদয় মণ্ডল ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমি খুবই আশাবাদী যে মামলাটি প্রত্যাহার করা হবে। কারণ, আমাকে যেদিন গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়া হয়, সেদিন এসপি এবং প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, স্যার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মামলাটি করতে হচ্ছে, পরে আমরা মামলা প্রত্যাহার করে নেবো। আবার মামলার বাদী আসাদ মিয়াঁও আমাকে বলেছেন, তিনি মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না। প্রধান শিক্ষক তাকে স্বাক্ষর করতে বলেছেন, তিনি তাই করেছেন। ফলে আসাদও কোনো আপত্তি করবে বলে মনে হয় না।’’

‘‘হৃদয় মণ্ডল এলাকায় এলে কোনো সমস্যা হবে না’’

মুন্সীগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ মনে করেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন এতটাই ঘোলাটে যে, মামলা প্রত্যাহার না করলে উল্টে প্রধান শিক্ষক ফেঁসে যেতে পারেন। এই পরিস্থিতির জন্য এখন তো তাকেই অনেকে অভিযুক্ত করছেন।’’ তাই তার আশা- দ্রুতই হয়ত মামলাটি প্রত্যাহার হবে। 

তবে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক মনে করেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল এখন এলাকায় ফিরলেও কোনো ধরনের ঝামেলা হবে না। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘তার পরিবারের সদস্যরা তো এখনও এলাকাতেই আছেন। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তিনিও এলাকায় এলে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তবে তিনি স্কুলে কবে যোগ দেবেন সে ব্যাপারে তো আমরা কিছু বলতে পারি না।’’

এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। এর আগে তিনি দাবি করেছেন, আসাদকে মামলার বাদী হতে কে বলেছে তা তিনি জানেন না। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক প্রতিনিধি ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেই সব করা হয়েছে বলে দাবি তার। তবে আসাদ সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান শিক্ষক তাকে মামলার এজাহারে স্বাক্ষর করতে বলেছেন।