1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শব্দ দূষণ থেকে রক্ষায় ‘কোয়েটপ্রো’ প্রযুক্তি

১৯ নভেম্বর ২০১০

পরিবেশ দূষণের কথা বলতে গিয়ে আমরা প্রায়ই ভাবি বায়ু, পানি কিংবা মাটি দূষণের কথা৷ কিন্তু শব্দ দূষণ নিয়ে আমরা কম ভাবলেও নরওয়ের তেলক্ষেত্রগুলোর বিকট শব্দ থেকে বাঁচাতে কর্মীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে একটি বিশেষ যন্ত্রের৷

https://p.dw.com/p/QDId
Statoil, production, platform, Norway, Ölfeld, Nordsee. নরওয়ে, ‘স্টাটওয়েল', তেল উত্তোলন, কেন্দ্র
নরওয়ের ‘স্টাটওয়েল' এর একটি তেল উত্তোলন কেন্দ্র (ফাইল ছবি)ছবি: cc-by-nd/astronautilus

মেগাসিটি ঢাকায় বসবাস এবং চলাচল যাদের তাদের কাছে বায়ু দূষণের চাইতে হয়তো বড় সমস্যা মনে হয় শব্দ দূষণকেই৷ এমনকি অনেকেই ভাবেন যে, হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ ঢাকাতেই ঘটে৷ কিন্তু সেটা যে সম্পূর্ণ সঠিক নয় তা বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা যায় গভীর সমুদ্রের মাঝে তেল উত্তোলন ক্ষেত্রগুলোতে গেলেই৷ ইউরোপের সবচেয়ে তেল সমৃদ্ধ দেশ নরওয়ের উত্তর সাগরের বুকে এ ধরণের তেল ক্ষেত্রগুলোতে বিকট শব্দের মাঝে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের শ্রবণ ক্ষমতা খোয়াচ্ছেন শ্রমিকরা৷ এমনকি প্রতিবছর এ ধরণের ঘটনা ঘটছে কমপক্ষে ৬০০ জনের ক্ষেত্রেই৷

নরওয়ের মূল ভূখণ্ড থেকে তেলক্ষেত্রগুলোতে যাওয়া-আসার জন্য একমাত্র বাহন হেলিকপ্টার৷ ফলে তেল উত্তোলন ক্ষেত্রের অন্যান্য শব্দের সাথে হেলিকপ্টারের বিকট শব্দ সেখানকার কর্মীদের নিত্য সঙ্গী৷ উচ্চ শব্দের মধ্যেই দশ বছরের বেশি সময় ধরে উত্তর সাগরে কাজ করছেন স্টেলে আস৷ তিনি বললেন,‘‘ঘূর্ণন যন্ত্রপাতি, জলের তোড়ে ঘুরতে থাকা মোটরের চাকা, কপাটক এবং উত্তোলক যন্ত্রসহ রয়েছে আরো অনেক যন্ত্রপাতির তীব্র শব্দ৷'' আসের বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে উচ্চমাত্রার শব্দ দূষণে কাজ করার৷ তাই নিজের শ্রবণক্ষমতার সমূহ ঝুঁকির ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক তিনি৷

বিকট শব্দ থেকে কর্মীদের বাঁচাতে তাই ‘কোয়েটপ্রো' নামের বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে নরওয়ের বৃহত্তম তেল কোম্পানি ‘স্টাটওয়েল'৷ এটি কানে ব্যবহার করার মতো একটি ডিজিটাল প্লাগ৷ এটি ১২০ ডেসিবেল মাত্রার বিকট আওয়াজকে ৩০ ডেসিবেলে নামিয়ে এনে শ্রবণ উপযোগী করে কানে পৌঁছায়৷ শুধু শব্দের মাত্রা সহনীয় করে তোলা নয়, সাথে পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এনে দিয়েছে দ্বিগুণ ফল৷ এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করছেন আসলে মেলভ্যার৷ তিনি বললেন, ‘‘বাহিরের শব্দের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম এটি৷ যেমন হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময় সৃষ্ট বিকট আওয়াজকে কানে পৌঁছতে দেবে না এই প্লাগ৷ আবার এটি সাধারণ শ্রবণযন্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়৷ যেমন এটির ব্যবহারকারী স্পষ্টভাবে শুনতে পাবে তার কাছে পাঠানো রেডিও বার্তা এবং এর সাথে সংযুক্ত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে বার্তা ফেরত পাঠাতেও পারবে অপর প্রান্তে৷''

বিমানে কিংবা একটু গোলমালের মধ্যেও ভালো ঘুমের জন্য যেসব ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা হয়, এটিও তেমনই একটি প্লাগ৷ তবে এর সাথে তার দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে পকেটে বহনের মতো ছোট্ট কম্পিউটার৷ তাই সেকেন্ডের মধ্যেই বাইরের শব্দের মাত্রা বিশ্লেষণ করে তাকে কানের উপযোগী করা আবার মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা অপর প্রান্তে সরবরাহ করাও সম্ভব হচ্ছে৷ এটিকে দ্বিমুখী বেতার প্রযুক্তির সাথে যুক্ত করা থাকে যা যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এমনকি তেল ক্ষেত্রগুলোতে কর্মরত মানুষদের জন্য এটি জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে৷ মেলভ্যার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ‘‘মানুষের শ্রবণ শক্তি সুরক্ষায় বিশ্বে এটিই প্রথম যন্ত্র যা ব্যবহারকারীর কানের পর্দায় পৌঁছানো শব্দের সঠিক মাত্রা নিরূপণ করতে পারে৷ এমনকি আমরা এটির সাহায্যে নির্ধারিত সময়ে শব্দ শ্রবণের মাত্রা মেপে পরবর্তীতে কারো শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের ঘটনাও নির্ণয় করতে পারবো৷ ফলে কতটুকু মাত্রার শব্দ সহনীয় আর কত মাত্রা অসহনীয় সেটিও নির্ণয় করা যাবে আরো নিখুঁতভাবে৷''

তবে শুধুমাত্র প্রযুক্তি নির্ভর সুরক্ষাই নয়, বরং কর্মক্ষেত্রের শব্দ দূষণ কমানোর জন্য চাই আরো কিছু পদক্ষেপ৷ যেমন উত্তর সাগরের বিকট আওয়াজ উৎপাদনকারী যন্ত্রগুলোকে আলাদাভাবে কিছুটা দূরে স্থাপন করা৷ আর সেটি পুরোপুরি সম্ভব না হলে শব্দ রোধী যন্ত্রটি যেন সহজে ব্যবহার উপযোগী হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক