লিবিয়ায় বন্যা: ডারনা শহরে বিক্ষোভ, দমনের আশঙ্কা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩শহরের বাসিন্দারা সোমবার বিক্ষোভ করেছেন৷ তারা পূর্বাঞ্চলীয় সংসদের স্পিকার আগিলা সালেহর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শহর পুনর্গঠনের কাজ করারও দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷
স্পিকার সালেহ গত সপ্তাহে বন্যাকে ‘আল্লাহর কাজ' আখ্যায়িত করে এর জন্য রাজনীতিবিদদের দায়ী না করতে নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ যদিও ডারনা শহরের দুটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণেই এত প্রাণহানি হয়েছে৷ ২০২২ সালে ঠিক এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আবদেলওয়ানিস আশুর৷ লিবিয়ার সাভা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জার্নালে প্রকাশিত লেখায় তিনি বাঁধগুলো মেরামতের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছিলেন৷ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘বড় বন্যা হলে, উপত্যকা এবং শহরের বাসিন্দাদের জন্য এর পরিণতি হবে বিপর্যয়কর৷''
এদিকে, ডারনা শহর পুনর্গঠনের দায়িত্ব স্পিকার সালেহি, আবদেল মোনায়েম মেয়র আল-গাইতি (সদ্য বরখাস্ত হয়েছেন) ও পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের পেছনে থাকা প্রভাবশালী সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল খালিফা হাফতারের ছেলে সাদ্দাম হাফতারকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূ্র্বাঞ্চলীয় সংসদ৷ এর আগে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ডারনা শহরে জেনারেল হাফতারের অবরোধ ও যুদ্ধের পরও শহর পুনর্গঠনের দায়িত্ব এই তিন ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ হয়ে গেলেও তা কোথায় খরচ হয়েছে তা দেখানোর মতো কিছু ছিল না বলে ডয়চে ভেলেকে জানান ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সিনিয়র পলিসি ফেলো তারেক মাগারিসি৷
এসব কারণে বিক্ষোভকারীরা এবার আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শহর পুনর্গঠনের কাজ করার দাবি জানিয়েছেন৷
দমনের আশঙ্কা
২০১৪ সাল থেকে লিবিয়ায় দুটি সরকার কাজ করছে৷ পশ্চিমাঞ্চলয়ী সরকারের রাজধানী ত্রিপোলি এবং সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গঠিত সরকার ক্ষমতায় আছে৷ আর পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের রাজধানী তোব্রুক৷ সেখানে ক্ষমতায় জেনারেল হাফতার সমর্থিত সরকার৷ ডারনা শহরটি এই সরকারের অধীনেই পড়েছে৷ বিরোধীদের কঠোর হাতে দমনের জন্য পরিচিত জেনারেল হাফতার৷ তাই ডারনার বিক্ষোভকারীদের কথা শোনা হতে পারে বলে আশা করছেন না বিশ্লেষকরা৷ বরং বিক্ষোভ চলতে থাকলে তা দমন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের৷ এর প্রমাণও মিলেছে৷
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষক ভোলফ্রাম লাখার এক্স সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, এক ব্যক্তি ডারনার মেয়র ও সংসদের স্পিকার সালেহর বিরুদ্ধে টিভিতে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় নিরাপত্তা কর্মীরা তা বন্ধ করে দেন৷ পরবর্তীতে লিবিয়ার সাংবাদিক মোহাম্মেদ এলগ্রাজ এক্স মাধ্যমে জানান, ডারনা থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের তারেক মাগারিসিও সম্ভাব্য বিক্ষোভ দমন করা হতে পারে বলে মনে করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হাফতার ও লিবিয়ার রাজনীতিবিদেরা ক্রোধ দমন ও প্রতিবাদী মানুষদের দমিয়ে রাখতে সিদ্ধহস্ত৷''
জেনিফার হোলাইস/জেডএইচ