লাভ জিহাদ রুখতে আইন করছে দুই বিজেপি রাজ্য
২ নভেম্বর ২০২০এতদিন লাভ জিহাদ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা, কিন্তু এই প্রথম তাঁরা আইন করার কথা বললেন। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদের কাছে লাভ জিহাদ মানে মুসলিম ছেলেদের হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করা এবং মেয়েটিকে ধর্মান্তরিত করা। হিন্দু ছেলেদের মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করাকে তাঁরা ঘর ওয়াপসি বলে মনে করেন। মানে, হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছিল, এখন আবার সেই হিন্দুত্বেফেরা।
সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, বিয়ে করার জন্য ধর্মপরিবর্তন করা যাবে না। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে এক মুসলিম মেয়ের হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করার জন্য ধর্ম পরিবর্তন করা নিয়ে। কিন্তু এরপরেই লাভ জিহাদ নিয়ে সোচ্চার হন বিজেপি নেতারা। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর খাট্টার জানিয়েছেন, তাঁরা লাভ জিহাদ নিয়ে আইন করতে চলেছেন। হরিয়ানা সরকার তো আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শও করতে শুরু করেছে। অসমেও বিজেপি বলেছে, ফের ক্ষমতায় এলে তারা আইন করবে।
এমনিতে ভিন্ন ধর্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে ভারতীয় আইনে কোনো বাধা নেই। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা চাইলে এই বিয়ে হতেই পারে। তা হলে লাভ জিহাদ বিরোধী আইনের চরিত্র কী হবে? খাট্টার জানিয়েছেন, হিন্দু মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে তাঁদের ধর্মান্তরিত করা আইন করে বন্ধ করা হবে। খাট্টারের দাবি, ''শুধু শুধু দুইটি সরকার আইন করার কথা বলছে না। আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। দোষীরা যাতে শাস্তি পায়, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। নিরাপরাধদের যাতে হয়রানি না হয়, তাও দেখা হবে।'' কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, ধর্মের ভিত্তিতে এই ধরনের আইন করা সম্ভব নয়। আইন করতে হলে সব ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রেই তা চালু করতে হবে।
যোগী আদিত্যনাথ আবার নির্বাচনী জনসভায় রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেছেন, ''লাভ জিহাদ বন্ধ করতে হবে, না হলে রাম নাম সত্য হ্যায়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'' উত্তর ভারতের হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে শেষযাত্রার সময় 'রাম নাম সত্য হ্যায়' ধ্বনি দেয়া হয়। তার মানে লাভ জিহাদ করলে শেষ যাত্রার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অসমেও বিজেপি বলেছে, তারা যদি আবার ভোটে জিতে আসে, তা হলে ধর্ম গোপন করে বিয়ে করার চেষ্টা বন্ধ করতে আইন করা হবে। তার মানে মাস ছয়েক পরে আসাম ভোটে লাভ জিহাদ নিয়ে প্রচার করার পরিকল্পনা ঠিক করে ফেলেছে বিজেপি।
এই অবস্থায় কংগ্রেসের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কুমারী শৈলজা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ''কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তির জন্য ভারতে আইনের অভাব নেই। অপরাধের চরিত্র অনুসারে শাস্তি নির্ভর করে। তারপরেও কিছু রাজ্যে আইন করার কথা বলা হচ্ছে। আগে সেই আইনের খসড়া সামনে আসুক। তারপর মন্তব্য করব।''
কংগ্রেস সতর্কভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেও এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ''বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার সবসময় এমন কাজ করে যাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লোকের ঘৃণা তৈরি হয়। করোনার সময় তারা তাবলিগ নিয়ে প্রচার চালিয়েছিল। পরে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে এই প্রচার মিথ্যা। তারপর তারা ইউপিএসসি জিহাদ নিয়ে কথা বলে। সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়ে দিয়েছে সত্যটা কী?''
ওয়েইসি বলেছেন, ''যোগী আদিত্যনাথরা এখন লাভ জিহাদ নিয়ে কথা বলছেন। তিনি কি সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ পড়েছেন? না পড়ে থাকলে পড়ে নিন। তিনি কি স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট সম্পর্কে জানেন? নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এই সব বিষয় তুলছেন তাঁরা।''
সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ভারতীয় নাগরিককে তাঁর জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
ফলে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানা সরকার লাভ জিহাদ নিয়ে আইন করলে তা বিতর্কিত হতে বাধ্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)