আশঙ্কায় রাখছে ভবিষ্যৎ
২৬ অক্টোবর ২০২০কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশএসেছিল একেবারে শেষ মুহূর্তে৷ তাও পূজামণ্ডপ জনশূন্য রাখার ওই রায় অনেককেই স্বস্তি দিয়েছিল৷ আদালত নির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছিল, সীমিতসংখ্যক কর্মকর্তা ছাড়া বাইরের কেউ মণ্ডপের ভিতরে ঢুকবেন না৷ দর্শনার্থীদের থাকতে হবে নির্দিষ্ট দূরত্বে৷ প্রথম দু'দিন, অর্থাৎ ষষ্ঠী ও সপ্তমীর দিন নিম্নচাপের কারণে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় জনসমাগম সেভাবে হয়নি৷ আশ্বস্ত হয়েছিলেন মানুষজন, যাঁরা ভয় পাচ্ছিলেন সংক্রমণ ছড়ানোর৷ কিন্তু পরের দু দিনে আবহাওয়ার উন্নতি হতেই ছবিটা পুরো পাল্টে গেল৷ অন্যবারের মতো বিপুল সংখ্যায় না হলেও বহু লোক সেজেগুজে নেমে পড়লেন শহর–মফস্সলের রাস্তায়, ঠাকুর দেখতে৷ ঠেকানো গেল না ভিড় এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা৷ সেটাও এমন এক সময়ে, যখন পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে, এবং সেটাও পুজোর কেনাকাটা করতে রাস্তাঘাটে, দোকান–বাজারে ভিড় হওয়ার কারণে৷ এবার পূজার ভিড় কোভিড পরিস্থিতিকে আরও কতটা খারাপ করে, সেটা বোঝা যাবে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই৷ বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা৷
ডাঃ কৌশিক লাহিড়ি কোভিড পরিস্থিতির শুরু থেকেই নজর রাখছেন সংক্রমণের হারের ওঠানামার দিকে৷ তিনি জানাচ্ছেন, সারা ভারতে যে সময় কোভিড সংক্রমণের হার চড়ছে, পশ্চিমবঙ্গে তখন সংক্রমণ আপাত স্বস্তির জায়গায় ছিল৷ কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলায় বিশ্বকর্মা পূজা এবং পূজার বাজার পুরোদমে শুরু হয়ে গেল, যার প্রভাব অক্টোবরে এসে টের পাওয়া যাচ্ছে৷ নতুন সংক্রমণ দিনে এক হাজার বেড়ে গিয়েছে৷ অন্যদিকে পরীক্ষার হার কমছে৷ আর চার দিনের দুর্গাপূজার পর যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, তা ওনাম উৎসব পরবর্তী কেরালার কথা মনে করিয়ে দিতে পারে৷ দক্ষিণ ভারতের যে রাজ্যটিতে উৎসবের জনসমাগমের কারণে কোভিড সংক্রমণ ১০ গুণেরও বেশি বেড়ে গিয়েছিল৷
অথচ দৃষ্টান্তযোগ্য উদাহরণ চোখের সামনেই ছিল৷ ডাঃ লাহিড়ি বলছেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে গনেশ চতুর্থী কিন্তু এবার আটকানো হয়েছিল৷ এমনকি মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, এই তিনটে রাজ্যে ওদের যে ঐতিহ্যপূর্ণ গরবা নাচ, নবরাত্রি উৎসবে, সেটা এবার বন্ধ করা হয়েছে, নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সেইগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এবার সচেতন হওয়া উচিত ছিল৷’’ ডাঃ লাহিড়ি মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘ঈদের সমাবেশ বন্ধ ছিল, মহররম হয়নি৷ সবথেকে বড় কথা, দেশের বাইরে যদি বলি, আমাদের স্মরণকালের মধ্যে এই প্রথম সৌদি আরবে হজ হয়নি৷ বাইরের কেউ হজ করতে যাননি, এই প্রথম৷’’
দুর্গাপূজার উৎসবের রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আসছে বিহারিদের ছট পরব, তার পর দিওয়ালি এবং কালী পূজা৷ এসবের সম্মিলিত প্রভাবে সংক্রমণ কতটা ছড়াবে, তা বোঝা যাবে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই, যা যথেষ্ট উদ্বেগে রেখেছে চিকিৎসক মহলকে৷
১৬ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...