লটারি জিতছে কেউ, কালো টাকা সাদা হচ্ছে অনুব্রতের
১৮ নভেম্বর ২০২২শুধু অনুব্রত মন্ডল, তার মেয়ে ও সহযোগী এনামুল হক মিলে ছয়টা লটারি জিতেছিলেন। এছাড়াও তৃণমূলের এক রাজ্যসভা সাংসদের স্ত্রী বিপুল অঙ্কের লটারিজিতেছিলেন।
অনুব্রত একবার এক কোটি ও একবার ১০ লাখ টাকা লটারি জিতেছেন বলে দেখা গেছে। তার মেয়ে সুকন্যা একবার ২৫ লাখ, একবার ২৬ লাখ ও একবার ৫১ লাখ টাকার লটারি জিতেছেন। সবমিলিয়ে অনুব্রতের পরিবার ২ কোটি ১১ লাখের লটারি জিতেছে বলে সিবিআই হদিস পেয়েছে।
অনুব্রতকে নিয়ে তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই লটারি কেলেঙ্কারি নিয়ে নানা ধরনের তথ্য আসছে বলে দাবি করছে সিবিআই। যেমন, অনুব্রত একবার এক কোটি টাকার লটারি জিতেছিলেন। সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, সেই লটারির টিকিট কেটেছিলেন আসলে রঞ্জিত ধীবর। তিনি লটারিটা জেতেন। তারপর তার কাছ থেকে লটারির টিকিট কিনে নেন একজন দালাল। তিনি টিকিটটা বিক্রি করেন অনুব্রতকে। এজন্যই লটারিতে পাওয়া টাকাকে লটারি কেলেঙ্কারি বলা হচ্ছে।
কেন কেলেঙ্কারি?
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার ব্যাখ্যা, লটারির টিকিট যিনি কেনেন, তিনি লটারি জিতলে শুধু টিকিট থাকলেই হয়। ফলে তিনি সহজেই জেতা টিকিটটি বিক্রি করে দিতে পারেন। লটারির টিকিটের উপর কর আছে। ফলে এক কোটি টাকা জিতলে হাতে পাওয়া যায় কমবেশি ৭০ লাখ টাকা। কেউ লটারি জিতলে তার কাছে দালাল পৌঁছে যায়। দালাল হয়ত তাকে ৭০-৭৫ লাখ টাকা দিল। সে সানন্দে টিকিট বিক্রি করে দেয়। দালাল সেই টিকিট নিয়ে এবার অন্যকে ৮০-৮৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেই ব্যক্তি লটারির টাকা দাবি করেন। কেন তিনি লটারি জেতা টিকিট কেনেন? কারণ, এই সুযোগে তার কালো টাকা সাদা হয়ে যায়।
তদন্ত করতে নেমে সিবিআই দেখেছে, অনুব্রতর মেয়ের নামে ২০১৯ সালে একবার ২৫ লাখ ও একবার ২৬ লাখ টাকা জমা পড়েছে। অনুব্রতর নামে একবার ১০ লাখ টাকা জমা পড়েছে। সূত্র জানাচ্ছে, ওই দশ লাখের লটারিটা একজন গ্রামবাসী জিতেছিল। সে অনুব্রতের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেটা বিক্রি হয় বোলপুরের এক পুরসভা সদস্যের মধ্যস্থতায়। সিবিআই ওই কাউন্সিলারকেও জেরা করেছে।
সিবিআই তদন্তে দেখা গেছে, অনুব্রত বা তার মেয়ে ও সহযোগীরা মিলে যে লটারি জিতেছিল, তার টিকিট তারা কাটেনি। এভাবেই তারা অন্যের কাছ থেকে জেতা টিকিট জোগাড় করেছে।
শেষ যে লটারিতে জেতা টাকার অ্যাকাউন্টে জমার হদিশ পেয়েছে সিবিআই সেটা এনামুল হকের। এই এনামুল হলো গরুপাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত। ২০১৭ সালে এনামুলের অ্যাকাউন্টে লটারিতে জেতা ৫০ লাখ টাকা জমা পড়েছে। তাছাড়া তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেও লটারিতে জেতা একটি বড় অঙ্কের টাকা জমা পড়েছে। সিবিআইয়ের সন্দেহ গরুপাচারের কালো টাকা সাদা করার জন্য ওই লটারির টিকিট কেনা হয়েছিল।
কেন নিষিদ্ধ নয়?
ভারতের ১৩টি রাজ্যে লটারি আইনসঙ্গত। দিল্লির মতো দুইটি রাজ্যে শুধু রাজ্য সরকারি লটারির টিকিট কেনা যায়। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো অনেক রাজ্যে লটারি নিষিদ্ধ। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এতগুলি রাজ্য যখন লটারিকে নিষিদ্ধ করেছে, তখন পশ্চিমবঙ্গ কেন করেনি? লটারি কেলেঙ্কারি তো বারতে আগেও হয়েছে। লটারির টিকিট কাটে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঘটনাও প্রচুর ঘটেছে। তারপরেও মানুষের লোভকে হাতিয়ার করে এই ব্যবসার অনুমতি কেন দেয়া হয়?''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তা জানিয়েছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতিটা একটা শিল্পে পরিণত হয়েছে। কতরকমভাবে যে দুর্নীতি করা যায়, তার পথপ্রদর্শক হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। আর ঘুরেফিরে লটারির টিকিটের থেকে রাজনীতিকরা লাভবান হচ্ছে। তাই লটারিও রমরম করে চলছে।''
জিএইঅচ/এজি(পিটিআই, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)