রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে ঠেঙ্গার চরে!
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭তবে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিচার্স ইউনিট (রামরু)-এর প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সিআর আবরার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন৷
হাতিয়ার ওই দ্বীপে রোহিঙ্গাদের নেয়ার আগে সরকার বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ‘ডাটাবেজ' তৈরির উদ্যোগ নেবে৷ আগামী তিনমাসের মধ্যে তা ডাটাবেজ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা বাঙ্গালি সমাজের সাথে মিশে গেছে৷ তাই রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ঠভাবে চিহ্নিত করার জন্য স্থানীয় কমিটি করা হয়েছে এবং তাদের চিহ্নিত করা হবে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায়৷ ডাটাবেজ প্রস্তুত হয়ে গেলে মিয়ানমার সরকারের সাথে অথবা বিদেশি রাষ্ট্র বা সংস্থার সাথে কাজ ও কথা বলার সময়ে সুবিধা হবে৷''
শাহরিয়ার আলম জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে মিয়ানমারের অবৈধ নাগরিকদের হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে অস্থায়ী ক্যাম্পে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঠেঙ্গার চরে কাঠামো তৈরি করার কাজ চলছে৷'' তবে তিনি মনে করেন এ কাজে কিছুটা সময় লাগবে৷
জানা গেছে, কক্সবজারের কুতুপালং ক্যাম্পের ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার৷ কিন্তু সেখানে বাস করে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা৷ এর ফলে কক্সবাজার ও উখিয়াতে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে এবং সামাজিক, প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যগত সেবা দেয়া সম্ভব হয় না৷
কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গার চরে পাঠানো শুরু হতে পারে৷ এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘ ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গা পাঠানোর কাজ শুরু করতে সময় লাগবে৷ কিন্তু নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো৷ তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে থাকবে এবং আমরা চাইবো মিয়ানমার সরকার যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফেরত নেবে৷''
গত বছর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ কম অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে৷ এবং ৩০ হজারের বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে শুধু কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে৷ গত অক্টোবরের পর থেকে ৭০ হাজারে মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷
তবে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিচার্স ইউনিট (রামরু)-এর প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সিআর আবরার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সুচিন্তিত মনে করেন না৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর আগেও সরকার এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখান থেকে সরে আসে৷ কিন্তু নতুন করে এমন কী হলো যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে ঠ্যাঙ্গার চরে নিতে হবে? এটা বিশাল আয়োজন এবং খরচের ব্যপার৷ যদি আন্তর্জাতিক সহায়তা না পওয়া যায়, তাহলে সরকার কি এটা পারবে?''
তিনি বলেন, ‘‘ওই চর এলাকায় কোনো বসতি নেই৷ শরাণার্থীদের যদি ঠেঙ্গার চরে নেয়া হয়, তাহলে তাদের জীবিকার কী হবে? তাদের সব খবরচ কী সরকার বহন করবে? আর তারা একটি এলাকায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ নতুন এলাকায় গিয়ে তারা খাপ খাওয়াবে কীভাবে? আসলে এটা একটা অবাস্তব চিন্তা বলে আমার কাছে মনে হয়েছে৷ সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা৷''
নোয়াখালীর সাংবাদিক রনজিৎ চন্দ্র কুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ঠেঙ্গার চর এলাকার ওই দ্বীপটি হাতিয়া থেকেও বিচ্ছিন্ন৷ সেখানে তেমন জনবসতি নেই৷ এক বছর আগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ওই চরে প্রাথমিক জরিপের কাজ হয়৷ এখন সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে কাজ করছে৷
বন্ধু, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কি আপনি সমর্থন করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷