1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্ব জনমত গড়েছে বাংলাদেশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুতে সমালোচিত হলেও এখন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা মনে করছেন, বাংলাদেশ বিশ্ব মানবিক জনমত গড়েছে৷ পেরেছে বিশ্বকে অমানবিকতা অনুধাবন করাতে৷

https://p.dw.com/p/2k3jW
Rohingya Krise in Bangladesch
ছবি: DW/M.M. Rahman

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার স্যাটেলাইট দৃশ্য প্রকাশ করেছে৷ বলেছে, ‘‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ‘পরিকল্পিতভাবেই' রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে৷''

স্যাটেলাইট থেকে তোলা রাখাইন রাজ্যের অনেক ছবি বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি জানায়, ‘‘গত তিন সপ্তাহে আশিটিরও বেশি জায়গায় বিশাল এলাকা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ আর এই কাজ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো৷''

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরো জানায়, ‘‘রোহিঙ্গা নির্মূলের জন্য ‘স্কর্চড আর্থ' বা ‘পোড়া মাটি কৌশল' অবলম্বন করছে মিয়ানমারসেনাবাহিনী৷ এ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যাঁরা পালাতে চাইছেন তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে৷''

মুনশি ফয়েজ

ওদিকে মিয়ানমার সরকার বুধবার দাবি করে, ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে রোহিঙ্গাদের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্রামকে টার্গেট করে সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালিত করা হচ্ছে৷ ৪৭১টি গ্রামের মধ্যে ১৭৭টি গ্রাম জনশূন্য এবং ৩৪টি আংশিকভাবে পরিত্যক্ত৷

উল্লেখ্য, অভিযানের নামে নির্যাতনের মুখে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা বাংলাদেশে ১০ লাখ লোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসার আশঙ্কা করছে৷ প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার রোহিঙ্গা আসছেন বাংলাদেশে৷

বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং উদ্যোগের কারণে ইউএনএইচসিআর ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠাচ্ছে৷ ভারতের অবস্থান শুরুতে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থাকলেও, এই অবস্থান পরিবর্তন এসেছে৷ কারণ ইতিমধ্যেই ত্রাণ পাঠিয়েছে ভারত৷ দেশটির পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন৷ চীন এখনও মিয়ানমার সরকারের নীতির প্রতি সমর্থন দেখালেও, তারাও ত্রাণ পাঠাচ্ছে বলে ঢাকায় সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে৷ অন্যদিকে নিরপত্তা পরিষদে এ নিয়ে সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য৷

তানজুম উদ্দীন

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্ব রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে৷ তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেছে৷ তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের সমাধান ও নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ অবশেষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে একটি মানবিক ঐক্য স্থাপনে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্ব জনমতও গড়ে উঠেছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুরুতে দ্বিধা থাকলেও, রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট৷ আর এই স্পষ্ট অবস্থান নিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে জনমতের চাপ এবং দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম৷ মিয়ানমারকে ঘিরে চীন ও ভারতের যে কর্পোরেট স্বার্থ, সেখান থেকে তাদের অবস্থানেরও পরিবর্তন হচ্ছে জনমতের চাপে৷ ভারতের শিখ জনগোষ্ঠির একটি সংগঠন রোহিঙ্গাদের সাহায্য দিতে শুরু করেছে এরই মধ্যে৷''

তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের বর্তমান সংকট একটি মানবিক সংকট৷ আর মানবিক সংকটের কোনো দেশ, ধর্ম বা বর্ণ নেই৷ সেই দিক থেকে একটি বিশ্ব জনমত তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে৷ সেই মানবিক চাপ সরকারগুলোকে প্রভাবিত করছে, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যাই হোক না কেন৷ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেয়ার ফলে একটা ‘সেন্স অফ ইউনিটি' তৈরি হয়েছে৷ পাঁচ বছর চেষ্টার পর নিরাপত্তা পরিষদও সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করতে পেরেছে৷''

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই শিক্ষক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সামনে এই বিশ্ব জনমত একটি সুযোগ তৈরি করেছে৷ বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ ধেকে আসা ত্রাণ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিতরণ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের আস্থা আরো বাড়বে৷ যা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নির্ধারণ এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে৷ তবে বাংলাদেশের এখন কাজ হলো রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা, যাতে মিয়ানমার ভবিষ্যতে এই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে৷ মিয়ানমার আগেও এই জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করেছে৷ তাই আবারো যে করবে না, তা বলা যায় না৷''

Infografik Rohingya Bevölkerung DEU

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথমদিকে হয়ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং কৌশল অতটা দৃশ্যমান ছিল না৷ ফলে অনেকে মনে করেছেন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট নয়৷ এখন তা দৃশ্যমান হয়েছে এবং তার ফল পাওয়া যাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে একমত হচ্ছে৷ বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে৷ বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যাকে মানবতার সংকট হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে৷ তাই এখন সবাই এগিয়ে আসছে৷ প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসছে৷ নিরপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ একটি বড় ধরনের অগ্রগতি বলে আমি মনে করি৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান তখনই হবে যখন তাঁদের নাগরিকত্ব নির্ধারণ হবে এবং তাঁরা তাঁদের নিজ দেশে ফিরতে পারবেন৷ এবার মানবতার পক্ষে যে ঐক্যমত তৈরি হচ্ছে, তাতে আমি আশাবাদী যে রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যারও সমাধান হবে, তবে সময় লাগবে৷ বাংলাদেশকে এখন কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে আরো জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে৷ আর মানবতার পক্ষে ঐক্যমত সৃষ্টি করে বাংলাদেশ বিশ্বের যে আস্থা অর্জন করেছে, তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান