রেগেমেগে ভারতের এক কৃষক যা করলেন...
২২ মার্চ ২০১৮ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের জালনা জেলার পোহেগাঁও গ্রামের কৃষক প্রেম সিং চৌহান৷ নিজের জমিতে এবার চাষ করেছিলেন কপি আর টমেটোর৷ চাষের কাজে লাগিয়েছিলেন প্রায় ৪০,০০০ রুপি – ফসল বেচে যা পেয়েছেন, তা থেকে পরিবহণ ইত্যাদি খরচ বাদ দিলে, পড়ে থাকে মাত্র ৪,০০০ রুপি৷ তার মধ্যে গোটা ফুলকপি ফসলের জন্য মূল্য ধরে দেওয়া হয়েছে সাকুল্যে ৪৪২ রুপি৷
এরপর যদি চৌহান রাগে, দুঃখে পাগল হয়ে গিয়ে নিজের ছোট কোদালটা নিয়ে কপিক্ষেতের কপিগুলোর মুণ্ডচ্ছেদ করেন, তাহলে এই পাগলামোর পিছনে যে কতটা রোষ আর হতাশা লুকিয়ে রয়েছে, সেটা অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজতত্ত্ববিদ ও রাজনীতিকরা একবার ভেবে দেখতে পারেন৷
এর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগেই প্রায় ৩৫,০০০ কৃষক নাসিক থেকে মুম্বই অবধি লংমার্চ করে ভারতের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক-আর্থসামাজিক অমায়িকতার ভিত নড়িয়ে দিয়েছেন, মুখোশ খুলে দিয়েছেন৷ মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার কৃষকদের দাবি মেনে নিয়ে ঋণ মকুব থেকে শুরু করে জমি হস্তান্তরের প্রতিশ্রতি দিয়েছেন৷ ঘটনাটির রাজনীতিকরণ ঘটতে বেশি সময় লাগেনি৷ বামপন্থিরা বলছেন, অভুক্ত মানুষ যতদিন থাকবে, ততদিন বামপন্থা থাকবে৷ কংগ্রেসের চাঁই চাঁই নেতারা পোস্ট বা টুইট করছেন৷ আর বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের মানুষ এরকম একটা সহমর্মিতা দেখানোর সুযোগ পেয়ে একেবারে মার্কিনি কায়দায় হ্যাশট্যাগ মারা আন্দোলনটাকে বুকে করে নিয়েছেন – সেল্ফ- মেড না হলেও, সেল্ফি-মেড আন্দোলন তো বটে৷
প্রেম সিং চৌহান নিজের ক্ষেতে একা যা করলেন, তা কিন্তু ভারতে কৃষকদের বাস্তবের কথাই আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে৷ চৌহান একটি মারাঠি নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, ‘‘আমি এত রেগে গিয়েছিলাম যে, খামারে কীটনাশক থাকলে, আমি সেদিন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতাম৷’’
গত দু'বছরে ব্যাংকের ঋণ শোধ না করতে পেরে মহারাষ্ট্রে যেসব কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, তাদের স্মরণ করেই শুরু হয় ৬ই মার্চের কিসান লং মার্চ৷ ঋণ মকুব এক কথা, আর ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া আরেক কথা৷ আর সেটাও আবার শুধু একটিমাত্র ইস্যু৷ তাই ভাবছিলাম, ভারতের কিসানদের লং মার্চ বাস্তবিক দীর্ঘ হবে৷
এসি/এসিবি