রূপান্তরী বর্ণমালা
২ এপ্রিল ২০১৮ওঁদের জীবন এমনিতে বড় বেরঙিন৷ কারণ, ওঁরা সমাজের প্রান্তিক মানুষ৷ যে সমাজ ওঁদের আলাদা লিঙ্গ পরিচয়কে স্বীকৃতি দেয় না৷ ওঁদের রূপান্তরের ‘স্বাভাবিক' প্রবণতাকে অস্বাভাবিক বলে চিহ্নিত করে৷ ওঁদের দূরে সরিয়ে রাখে সমাজের মূল স্রোত থেকে৷ তাই ওঁরা যখন সামনে পেলেন বিরাট ক্যানভাসের মতো একটা দেওয়াল, হাতে পেলেন রঙ-তুলি, ওঁদের ভেতরের সমস্ত উচ্ছ্বাসই যেন রঙ হয়ে উৎসারিত হলো৷
উত্তর কলকাতার সোনাগাছি, যা শুধু ভারতের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লী, সেখানে দুটি দেওয়ালে ছবি এঁকেছেন ট্রান্সজেন্ডার, বা রূপান্তরকামীরা৷ তার মধ্যে একটি তিনতলা বাড়ির বিরাট দেওয়াল, যে বাড়িতে দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র চালায় বেসরকারি সেবা সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি৷ যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে দুর্বার৷ তাদের কাছে এই রঙিন প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল বেঙ্গালুরুর ‘আরাবনী আর্ট প্রোজেক্ট' নামে একটি সংস্থা, যারা রূপান্তরকামীদের আঁকা ছবি দিয়ে সাজায় সামাজিক পরিসর৷ রূপান্তরকামীদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে, তাঁদের কথা ছবির মাধ্যমে সমাজের কাছে তুলে ধরে৷
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মুখপাত্র মহাশ্বেতা গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, অ্যামেরিকার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একদল শিক্ষানবিশ ছাত্র-ছাত্রী সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন৷ ওঁদের আর্থিক সহযোগিতায় এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে এই প্রকল্পটি সম্ভব হয়েছে৷ আপাতত সোনাগাছি এলাকার দু'টি বাড়িতে করা হয়েছে এই দেওয়ালচিত্র৷ অদূর ভবিষ্যতে একই ধরনের কাজের জন্য আরও কিছু এলাকা চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে এভাবেই ছবি এঁকে রূপান্তরকামীদের সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ এছাড়া ওই মার্কিন ছাত্র-ছাত্রী দলটি রূপান্তরকামীদের ওপর একটি তথ্যচিত্র তৈরির কাজও শুরু করেছে৷
দু'টি দেওয়ালচিত্রের মধ্যে একটিতে এই প্রকল্পের মৌলিক ধারণাটিকেও লিখেছেন রূপান্তরকামীরা৷ সেটি হলো, ‘আমি কে? আমাকে চেনো... আমি আছি'৷ এই যে নিজেদের চেনাতে চাওয়ার উদ্যোগ এবং রূপান্তরকামীরাও যে সমাজেরই অংশ, এই বার্তা পৌঁছে দেওয়াটাই এই আর্ট প্রজেক্টের মূল সুর৷ কিন্তু কিভাবে বিষয়টা মাথায় এলো প্রথম? এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রূপান্তরকামী শিন্টু বাগুই ডয়চে ভেলেকে জানালেন, বেঙ্গালুরুর আরাবনী আর্ট প্রোজেক্ট প্রথম প্রস্তাবটা ওঁদেরকে দেয়৷ ওঁদের সেটা পছন্দসই হয়, এই প্রচারের অভিনবত্বের জন্য৷ কী আঁকা হবে, সেই ছবি বা বিভিন্ন মোটিফ, এবং রংও ওরাই বেছে দিয়েছিল৷ আর ছবি আঁকার কাজে অংশ নিয়েছিলেন ওঁরা সবাই, দূর্বার ছাড়াও ‘আনন্দম' এবং ‘সমভাবনা' বলে আরও দুটি সংগঠনের প্রায় ২০-২৫ জন রূপান্তরকামী৷ কী আঁকলেন, সেটা নিজেই বোঝালেন শিন্টু৷ আর কাজটা করে কেমন লাগছে? শিন্টু বললেন, প্রথমত, এমন শিল্পে কলকাতায় ওঁরাই প্রথম, এটা একটা ভালো লাগার জায়গা৷ আর রূপান্তরকামীদের জন্যে এই দেওয়ালচিত্র অবশ্যই আরও একটু এগিয়ে যাওয়া৷