রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত নয়
৯ ডিসেম্বর ২০১৪জার্মান মিডিয়ায় প্রকাশিত আবেদনে স্বাক্ষরকারীরা ইউরোপে পুনরায় যুদ্ধ ঘটার সম্ভাবনা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সপক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন৷ তাঁদের এ' মনোভাব ঠিক বৈকি: ইউরোপে আর কোনোদিন যুদ্ধ ঘটা উচিত নয়৷ গণতান্ত্রিক দেশগুলির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশনীতিমূলক হাতিয়ার হলো আলাপ-আলোচনা৷ রাশিয়ার সঙ্গে আজও সে' অনুযায়ী আচরণ করা উচিত৷ কিন্তু জার্মান রাজনীতি, অর্থনীতি তথা সাংস্কৃতিক জীবনে যাঁদের নিঃসন্দেহে অবদান রয়েছে, এমন সব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এই মহৎ আহ্বান বর্তমান সংঘাতের সব দিক বিবেচনা করে করা হয়নি৷
তথ্যের পরিবর্তে কষ্টকল্পনা
ইউরোপে আর যুদ্ধ ঘটলে চলবে না - সে তো বটেই৷ কিন্তু বাস্তব হলো: এ'বছরের বসন্তে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সামরিক পন্থায় ক্রাইমিয়া অধিকার করে, পরে তা রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করেন৷ এক্ষেত্রে যে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে প্রকাশ্য যুদ্ধের অবতারণা ঘটেনি, তার একমাত্র কারণ হলো, ক্রাইমিয়ার সামরিক প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা কিয়েভ'এর ছিল না৷ ওদিকে পূর্ব ইউক্রেনে সত্যিই খোলাখুলি যুদ্ধ চলেছে এবং সে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ রাশিয়া সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ না করলে এ' যুদ্ধ সম্ভব হত না৷ মহাজনদের শান্তির আহ্বান এই বাস্তব পরিস্থিতির খেয়াল রাখেনি৷
অশুভতর হলো: মনীষীদের আহ্বান থেকে মনে হতে পারে যে, পশ্চিমি বিশ্ব এবং জার্মান রাজনীতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পন্থা প্রয়োগ করতে চায় - যা কিনা সম্পূর্ণ আজগুবি৷ জার্মান সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তাব্যক্তিরা এককণ্ঠে সংঘাতের সামরিক সমাধান বর্জন করে এসেছেন৷ বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার যাবতীয় সমস্যা সত্ত্বেও মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক সংলাপ অব্যাহত রেখেছেন৷ খোলাচিঠির স্বাক্ষরকারীরা যদি তাঁদের প্রকাশ্য আহ্বানের মাধ্যমে জার্মান নেতৃবর্গের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে চেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁরা ঠিক কাজই করেছেন৷ কিন্তু তাঁদের আহ্বানে রুশ রাজনীতির প্রতি একই আবেদন, অর্থাৎ ‘‘পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী আচরণ করার'' ও শান্তি রক্ষার আবেদন জানানো হয়নি৷
সাংবাদিক-ভাষ্যকারেরা যে রাশিয়ার ন্যাটো দ্বারা পরিবেষ্টিত হবার আশঙ্কা সম্যক উপলব্ধি করতে পারেননি, সে'ও এক কিংবদন্তি৷ প্রথমত, ন্যাটোর জর্জিয়া এবং ইউক্রেন'কে সদস্য করার কোনো পরিকল্পনা নেই৷ সদ্য ২০০৮ সালে উভয় দেশকে সেই সদস্যতার সুযোগ দেওয়া হয়নি - এবং এ'বছর ওয়েলস'এ ন্যাটোর শীর্ষবৈঠকে প্রায় সেই সিদ্ধান্তই বজায় রাখা হয়েছে৷ দ্বিতীয়ত, খোলাচিঠির স্বাক্ষরকারীদের এ'কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, রাশিয়ার নিরাপত্তাগত স্বার্থ ছাড়া ইউক্রেনীয় এবং জর্জীয়দের ভীতিও রয়েছে৷
পরস্পরবিরোধী
আহ্বানের শেষে ১৯৯০ সালের কথা বলা হয়েছে, যখন স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের এক অবিভক্ত ইউরোপ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখা হয়েছিল৷ আহ্বানের শেষ বাক্যটি হলো: ‘‘ইউক্রেন সংঘাত অবধি ইউরোপ ঠিক পথে চলছে, বলে আমরা মনে করেছিলাম৷'' বাক্যটি যুক্তিবিরুদ্ধ, কেননা ইউক্রেন ঠিক সেই স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক ইউরোপের অঙ্গ হতে চেয়েছিল৷