রাশিয়া-কোরিয়ার মধ্যে পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা
২ নভেম্বর ২০১১ইদানিং কোরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ তাই জরুরি ভিত্তিতে একটি নতুন সরবরাহকারী দেশের প্রয়োজন দক্ষিণ কোরিয়ার৷ প্রশ্ন হলো - সেটি কোন দেশ?
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মুয়াং বাক'এর এ সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ'এর সঙ্গে দেখা করার কথা৷ আলোচনার শীর্ষে থাকছে দক্ষিণ কোরিয়ার জ্বালানি সংকট৷ কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়া স্বপ্ন দেখছে এমন একটি পাইপলাইন বসানোর, যার মধ্যে দিয়ে গোটা কোরিয়া উপকূলের জ্বালানি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে৷ কিন্তু ভৌগোলিক কারণেই এই পাইপলাইনটাকে যেতে হবে উত্তর কোরিয়ার মধ্যে দিয়ে৷ আর সেখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা৷ কারণ দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এখনও যে বন্ধুসুলভ নয়৷
এ বছরের অগাস্ট মাস পর্যন্তও এই পাইপলাইন তৈরির ব্যাপারটা একটা স্বপ্ন ছিল৷ এর পরপরই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং ইল রাশিয়া সফর করেন৷ কথা বলেন প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ'এর সঙ্গে৷ সেই আলোচনারও মূলে ছিল জ্বালানি সরবরাহ এবং পাইপলাইন তৈরির পরিকল্পনা৷
গত সেপ্টেম্বর মাসে দেওয়া একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মুয়াং বাক বলেছিলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়া জ্বালানি সরবরাহ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই৷ আমরাও রাশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছি৷ আশা করছি, কোনো এক সময়ে এই তিনটি দেশ একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে৷ তখন হয়তো আরো দ্রুত এগিয়ে যাবে এ প্রকল্পের কাজ৷ আর তা যদি হয়, তবে সকলেই উপকৃত হবে৷''
বিশ্লেষকরা জানান, একটি পাইপলাইন বসানোর কথা হচ্ছে কোরিয়ার উপকূলে৷ এর ফলে দু'টি দেশই যে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে - তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ তবে এই গ্যাস খুব সস্তা হবে না৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি দাঁড় করাতে খরচ হবে তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ৷ সৌল-এর স্যামসং ইকোনমিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিবেশ এবং জ্বালানি বিষয়ক গবেষক কাং হি চ্যান বিশ্বেস করেন, যে অর্থ খরচ করা হবে তা কিছুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি উসুল হবে৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নিত্যদিনের চাহিদা বাড়ছে৷ বেশির ভাগ গ্যাসই ইউরোপ এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো থেকে আসে৷ আর সেগুলো আসে জাহাজে করে৷ কিন্তু আমরা যদি পাইপলাইনের সাহায্যে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি করতে পারি, তাহলে তার মূল্য হবে প্রতিযোগিতামূলক৷''
গবেষক হি চ্যান আরো জানান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়া যদি পাইপলাইন বসানো নিয়ে একযোগে কাজ করতে চায় তাহলে উত্তর কোরিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে একজন বন্ধু হয়ে৷ দুই কোরিয়ার মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে৷ আর সেটাই হবে প্রথম কাজ৷
অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রুশ বিশ্লেষক আন্দ্রেই লানকভ৷ সৌল-এর কুকমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিশ্লেষক জানান, ‘‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প৷ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সবগুলো দেশই লাভবান হবে৷ তবে দুই কোরিয়ার সঙ্গে কাজ করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দু'টি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক, আদান-প্রদানে আস্থা এবং বিশ্বাস৷ এই মুহূর্তে আমি মনে করি না যে এ ধরণের কোনো কিছু দুই কোরিয়ার মধ্যে ঘটছে৷''
অথএব সত্যিই সেই স্বপ্নপূরণ হয় কিনা - এবার সেটাই দেখার বিষয়!
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ