1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গ রেখে জি২০ ঘোষণাপত্র জারি

৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জি২০ শীর্ষবৈঠকের পর মতৈক্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র জারি হলো। রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়েও সেখানে অনেক কথা আছে।

https://p.dw.com/p/4W942
জি২০ বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী।
ভারতের চেষ্টা সফল। মতৈক্যের ভিত্তিতে জি২০ বৈঠকের পর ঘোষণাপত্র জারি করা হলো। ছবি: Evelyn Hockstein/AP Photo/picture alliance

জি২০ বৈঠকে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা ছিল, এখানে কোনো ঘোষণাপত্র জারি করা যাবে কিনা? কারণটা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মতবিরোধ। পশ্চিমা দেশগুলি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করার পক্ষে ছিল। কিন্তু রাশিয়া, চীন তা মানতে রাজি ছিল না। ভারতও এই যুদ্ধে কারো পক্ষই নেয়নি। ফলে তারা এমন একটা অবস্থান নিতে চাইছিল, যাতে সর্বসম্মতভাবে বিষয়টি নিয়ে এগোনো যায়। আর এটাই ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং কূনীতিকদের পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ। শেষপর্যন্ত সেই পরীক্ষায় তারা সফল হয়েছেন। সকলের সম্মতিতে ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে কী বলা হয়েছে?

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দিল্লি ঘোষণাপত্রে মোট সাতটি পয়েন্ট আছে।

দিল্লি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ''বিশ্বে যুদ্ধ ও অন্য সংঘাতের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের কষ্ট বাড়ছে বলে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমরা বালিতে যে আলোচনা করেছিলাম, তা মনে করিয়ে দিয়ে আবার বলতে চাই, আমরা আমাদের জাতীয় অবস্থানের কথা বলেছি এবং জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ও নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব নেয়া হয়েছিল তার কথা বলেছি। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো দেশ যেন জোর করে অন্য দেশের জমি অধিকারের এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা না করে। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি একেবারেই মানা যায় না।''

ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ''জি২০ হলো আন্তর্জাতিক আর্থিক সহযোগিতার মঞ্চ। এটা কোনো ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের মঞ্চ নয়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এই বিষয়গুলির একটা বড় প্রভাব বিশ্বের অর্থনীতির উপর পড়ে।''

দিল্লি ঘোষণাপত্রে এটাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, ''ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বের খাদ্য ও এনার্জি সিকিউরিটি, সাপ্লাই চেন, মুদ্রাস্ফীতি ও বৃদ্ধির উপর। কম উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি এখনো কোভিড ১৯-এর ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি, তারা আরো চাপের মধ্যে পড়েছে।''

তুরস্কর প্রয়াসের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ''জাতিসংঘের উদ্যোগে রাশিয়া ও জাতিসংঘের সচিবালয়ের মধ্যে যে ইস্তাম্বুল সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল, তাতে রাশিয়ার খাদ্যসামগ্রী ও সার যাতে বিশ্ববাজারে আসে এবং ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য যাতে বাইরে আসতে পারে তা নিয়ে সমঝোতা হয়। আমরা চাই, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য ও সার যেন সময়ে বিশ্ববাজারে আসতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা আফ্রিকার উন্নয়নশীল ও কম উন্নত দেশের চাহিদা।''

এই প্রসঙ্গেই খাদ্য ও এনার্জি সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। সেখানে বলা হয়েছে, ''আমরা আবেদন জানাই, পরিকাঠামোর উপর আঘাত যেন না করা হয়। এই সংঘাতের প্রভাব যেভাবে বেসামরিক মানুষের উপর পড়ছে এবং তার ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হচ্ছে তাতে আমরা গভীরভাবে চিন্তিত।''

বলা হয়েছে, ''আমরা সব দেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন আন্তর্জাতিক আইন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব মেনে চলে। শান্তি ও স্থিরতাকে অক্ষুন্ন রাখে। তারা যেন আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান করে। বিশ্বের অর্থনীতির উপর যুদ্ধের প্রভাবের মোকাবিলায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য যে কোনো গঠনমূলক উদ্যোগ আমরা সমর্থন করব। জাতিসংঘের চার্টার মেনে শান্তি, বন্ধুত্ব ও সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বাড়ানো ও এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ নীতির পক্ষে থাকব।''

কী করে মতৈক্য হলো?

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ''মতৈক্যের পিছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। প্রচুর আলোচনা হয়েছে। সকলে সহযোগিতা করেছে। তারপর ঘোষণাপত্র নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। পুরো বিষয়টার মধ্যে স্বচ্ছ্বতা ছিল।''

আর অমিতাভ কান্ত বলেছেন, ''ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এব্যাপারে ভারত খুবই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। আলোচনা খুবই টাফ ও রুথলেস ছিল। শেষে বিষয়টি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। আমরা বলেছি, আমাদের নেতারা চান, তাই আমাদের  একমত হতেই হবে।''

জিএইচ/এসজি