1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবুজ গ্রহ

১৮ মে ২০১২

প্যালেস্টাইনের তো সমস্যা কম নয়৷ ইসরায়েলের কাছ থেকে অধিকৃত এলাকা ফিরে পেতে চলছে তাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম৷ তারই মাঝে শহরের সবুজায়ন করতে চায় রামাল্লার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা৷ যা এক দারুণ উদ্যোগ৷

https://p.dw.com/p/14xFz
ছবি: AP

জেরুসালেমের উত্তরে রামাল্লা শহরে ত্রিশ হাজার মানুষের বসবাস৷ যে রামাল্লা আসলে প্যালেস্টাইনের সরকারি সদর দপ্তর৷ রাজধানী৷ যেখান থেকে অধিকৃত প্যালেস্টাইনের প্রশাসন তার কাজকর্ম করে থাকে৷ সেই রামাল্লার মানুষজন তাদের অধিকাংশ সময়টাই নানান সমস্যা নিয়ে আটকে রয়েছে৷ কিন্তু তারপরও গোটা বিশ্বের সামনে যে সমস্যা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পাকিয়ে চলেছে, সেই পরিবেশের দিকে মনোযোগ দিতে চায় রামাল্লার মানুষ৷ আর সেই মনোযোগ দেওয়ার কাজটা শুরু করেছে প্রথমে রামাল্লার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা৷

Nahost Gaza Ferienlager
ছবি: AP

উদ্যোগটা প্রথমে নিতে শুরু করেছিল প্রশাসনই৷ তারা লক্ষ্য করতে থাকে, ক্রমশ জঞ্জাল আর বর্জ্যের মাত্রা ছাড়াচ্ছে শহরে৷ ময়লা ফেলার জায়গায় জমে উঠছে কাগজ আর প্লাস্টিকের বিপুল পাহাড়৷ কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কিংবা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে সেসবের পুনর্ব্যবহারের দায়িত্ব নিতে কেউই এগিয়ে আসছে না৷ সুতরাং প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হতে থাকে স্কুলে স্কুলে গিয়ে সচেতনা বাড়ানো৷ আর সেটাই দারুণ কাজে এসেছে রামাল্লার ক্ষেত্রে৷ নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে গিয়েছে পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা৷ যে বার্তাকে তারা করে নিয়েছে নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয়৷

সে কাজে নেমে সাফল্যের মুখ দেখছে রামাল্লা শহর৷ ধরা যাক, মায়ার ফাওয়াডল'এর কথাই৷ সেন্ট জোসেফ'স প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রী ছোট্ট সেই মেয়েটির পরণে একটা ঝকমকে পোশাক আর মাথায় সুন্দর একখানা চুপি৷ সেগুলো দেখিয়ে সে জানায়, ফেলে দেওয়া কাগজ আর প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তুলে সে এগুলো তৈরি করেছে৷ মায়ার আরও জানাচ্ছে, ‘‘আমাদের বাবা মাদের আমরা সচেতন করে তুলছি৷ যা কিছু বর্জ্য রয়েছে, তার অনেকগুলোকেই নতুন করে ব্যবহার করাই যায়৷ সেটা সকলকে শেখাচ্ছি আমরা৷ বিশেষ করে প্লাস্টিক আর কাগজ, এ দুটোকে যাতে প্রকৃতির মধ্যে ফেলে দূষণ না বাড়ানো হয়, সেটা হল প্রথম শিক্ষা৷ আর কাগজের ব্যবহার যত কমবে, ততই তো ভালো হবে প্রকৃতির জন্য৷''

Hamas Sommer Camp Lager Gaza Stadt Palästina Flash-Galerie
ছবি: AP

ছোট্ট মায়ারের মুখে এই কথাগুলো শুনলে অবাক লাগতেই পারে, কিন্তু এভাবেই হাজার হাজার মায়ারের মত ছেলেমেয়েকে বুঝিয়ে ফেলতে পেরেছে রামাল্লা শহরের প্রশাসন৷ ফলে এখন আর প্রশসানকে এ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে হচ্ছে না৷ যাকিছু করার করে ফেলছে স্কুলের ছেলেমেয়েরাই৷ তারাই জঞ্জাল কুড়িয়ে ফেলছে, করে ফেলছে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা কুড়িয়ে নেওয়ার কাজ৷ সেগুলোকে পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তুলতে কারখানায় পাঠানো, কিংবা শহর জুড়ে সবুজায়ন ফিরিয়ে আনতে প্রচুর পরিমাণে গাছপালা পোঁতার কাজটাও করছে ছেলেমেয়েরা৷ বোঝাই যাচ্ছে, গোটা শহরটাকে বদলে ফেলতে এগিয়ে এসেছে এই নতুন প্রজন্ম৷ নিজেদের ভবিষ্যতটাকে তারা সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায়৷

রামাল্লার বিভিন্ন স্কুলের মধ্যে সেন্ট জোসেফ'স স্কুলটি সহ মোট ১৪টা স্কুলকে বেছে নিয়েছে রামাল্লা প্রশাসন৷ রামাল্লা সরকার এই সবুজায়ন প্রকল্পে ৫২ হাজার মার্কিন ডলারের বাজেট তৈরি করেছে৷ যে বাজেটের সাহায্যে এবং এইসব স্কুলের ছেলেময়েদের বিনা পারিশ্রমিকে দেওয়া শ্রমের মাধ্যমে শহরের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অনেকটাই ফলবতী হয়েছে, একথাও বলা যায়৷ সবচেয়ে বড় কথা, ছোট ছোট ছেলেমেয়দের কথা তো ফেলতে পারছেন না তাদের বাবা মায়েরা৷ তাই বোঝাই যাচ্ছে, নতুন প্রজন্ম শুধু যে নিজেরাই শিখছে তা নয়, তৈরি করে নিচ্ছে পুরানো প্রজন্মকেও যাতে এই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে৷

সে চেষ্টায় কোন অন্তও নেই৷ কেন? সেটা জানতে রামাল্লা শহরের একটা মে মাসের ঝকঝকে সোনালি রোদের বিকেলে যেতে হবে ওই সেন্ট জোসেফ'স স্কুলের প্রাঙ্গনে৷ স্কুল শেষ হয়ে গেলেও উজ্জ্বল সুন্দর একঝাঁক ছেলেমেয়ে এখনও কাজ করে যাচ্ছে৷ কী কাজ? তারা সকলে মিলেমিশে এখন গাছেদের জন্য সার তৈরিতে ব্যস্ত৷ স্কুলের টিফিনে আনা রোজের স্যান্ডউইচ বা খাবারদাবারের ফেলে দেওয়া অংশ দিয়ে তারা একটা সার বানাবার ক্ষেত্র তৈরি করেছে৷ সেখানে পোকামাকড়দের পর্যবেক্ষণ করছে ছেলেমেয়েরা৷ জানছে, কীভাবে তৈরি হয় গাছেদের জন্য প্রয়োজনীয় সার৷ জেনে নিচ্ছে, এই পৃথিবীটাকে সুন্দর করে নিলে বেঁচে থাকাটা কত মধুর হয়ে ওঠে!

আর কচি সবুজ এই তরতাজা প্রাণেরা যদি প্রকৃতিকে বাঁচানোর দায়িত্ব নেয়, তবে তার থেকে সুন্দর আর সমৃদ্ধশালী আর কী বা হতে পারে?

প্রতিবেদন: এপি/সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য