রানা প্লাজা ধসের দুই বছর
২২ এপ্রিল ২০১৫গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই বছরকে সামনে রেখে একটি জরিপ চালানো হয়৷ মঙ্গলবার এই জরিপের ফলাফল জানানো হয়৷ এতে বিভিন্ন কারখানার দুই হাজার শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে৷ জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, গার্মেন্টস পরিদর্শক জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সম্পর্কে ৯২ শতাংশ শ্রমিক কিছুই জানেন না বা বোঝেন না, ৮০ শতাংশ শ্রমিক গার্মেন্টসের বিকল্প থাকলে এ পেশা ছেড়ে দিতেন৷ তিনি বলেন, শ্রমিকরা আনন্দের সঙ্গে গার্মেন্টসের কাজ করতে ছুটে আসছে, বিষয়টি তা নয়৷ এ খাতে এখনো শ্রমিকদের জীবন ও কর্মপরিবেশ নিম্নমানের – এমনকি বর্বরোচিত৷
এমন পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা ও তাজরীনের ‘খুনী' মালিকদের হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া, অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, ২৪ এপ্রিলকে (রানা প্লাজা ধসের দিন) শোক দিবস ঘোষণা করা, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের ৪৮ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া, আহতদের সুচিকিত্সা দেয়া, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক কারখানা গড়ে তোলা, ইপিজেড এলাকাসহ সব এলাকায় ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে৷
এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের উন্নত কর্মপরিবেশ, ইউনিয়ন গঠনের অধিকারসহ তাদের আইনসঙ্গত অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডাবলিউ৷ সংগঠনের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ যদি রানা প্লাজা বিপর্যয়ের মতো আরেকটি দুর্ঘটনা এড়াতে চায়, তাহলে দেশটির উচিত কার্যকরভাবে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করা৷ পোশাক কারখানার কর্মীরা যাতে দুর্ব্যবহার শঙ্কা ছাড়াই কাজের পরিবেশের ব্যাপারে তাদের কথা প্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে৷
ফিল রবার্টসন বলেন, পোশাক প্রতিষ্ঠানের যে ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপকরা পোশাক শ্রমিকদের ওপর হামলা এবং ইউনিয়ন গঠনের অধিকারকে অস্বীকার করেন, বাংলাদেশ যদি তাদের দায়ী না করে, সেক্ষেত্রে সরকার এ ধরনের প্রথাকে স্থায়ী করে তুলবে৷ এসব প্রথার কারণে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে৷ বাংলাদেশ সরকার, পোশাক প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং পশ্চিমা পোশাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি এইচআরডাবলিউ শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং পোশাক প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের (সুপারভাইজার) শ্রমিক নেতাদের বেআইনিভাবে টার্গেট করার ঘটনাগুলো অবসানের আহ্বান জানিয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১,১০০ জনেরও বেশি পোশাক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে৷ ওই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের পোশাক প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরও নিরাপদ করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে এইচআরডাবলিউ-র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
অপরদিকে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই বছর পরও শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের নিয়মিত চিকিত্সা ও পুনর্বাসন, দায়ীদের শাস্তির মত বিষয়ে এখনো সুরাহা হয় নি৷ এ সব বিষয়ে দ্রুততম সময়ে সম্মানজনক সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)৷ মঙ্গলবার রানা প্লাজার দুই বছরকে সামনে রেখে আয়োজিত এক সংলাপে সিপিডি-র পক্ষ থেকে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়৷
রানা প্লাজার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা, ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা অপসারণ, কারখানা পরিদর্শনকারী দল অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির (এনটিপিএ) কাজে সমন্বয় আনা, কারখানা সংস্কার কার্যক্রম কার্যকরভাবে সমাপ্ত করা, বিদেশী ক্রেতারা (বায়ার) পোশাকের উচিত মূল্য দেয়ার উপর গুরুত্ব দেন সিপিডি-র সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য৷