রাতে বাসায় পুলিশের অভিযান, দিনে নুরের ওপর হামলা
২ আগস্ট ২০২৩বুধবার বিকেলে হওয়া এ হামলার জন্য গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু হানিফ ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন৷ হামলায় ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। আবু হানিফ আরো জানান, আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং নুরকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে৷
আবু হানিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্র অধিকার পরিষদের পূর্ব নির্ধারিত প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল। রাজনৈতিক দলের ওপর দমন-পীড়ন, বুয়েটের ৩১ ছাত্রকে গ্রেপ্তার ও নুরের বাসায় পুলিশের তাণ্ডবের প্রতিবাদে ওই কর্মসূচি দেয়া হয়। নুর সেখানে গেলে তার ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিকেল পাঁচটার দিকে এ হামলা হয়।
তিনি বলেন, "আগে থেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। তারা মোটরসাকেলে করেও পুরো এলাকায় মহড়া দেয়। নুর মিছিল নিয়ে সেখানে যাওয়ার পর মোটরসাইকেল দিয়ে ঘিরে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়।”
তবে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, " নুর ও তার বহিরাগত সহযোগীদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করেছে। ছাত্রলীগ কোনো হামলা করেনি।” তিনি দাবি করেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছিল কয়েকদিন ধরে। তারই প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিকেলে রাজু ভাস্কর্য এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন চলছিল। সেই সময়ে নুর বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল করে ওই এলাকায় গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করে।”
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে গণঅধিবার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় বাসায় অভিযান চালিয়ে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে আটক করে। নুর ফেসবুক লাইভে অভিযোগ করেন, পুলিশ তার বাসার দুটি দরজা ভেঙে ঢুকে ইয়ামিনকে আটক করে। এ সময় তারা নারকীয় তাণ্ডব চালায় বলেও দাবি করেন নুর। তিনি বলেন, পুলিশ তার বাসার সিসি ক্যামেরার সরঞ্জাম ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, পুলিশকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাসায় ঢোকার অনুরোধ করা হলেও তারা শোনেননি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নুরের বাসায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ইয়ামিন ছিল। নুর অনুরোধ করেছিল তার বাসায় বাচ্চারা আছে, তারা ভয় পচ্ছে, পুলিশ যেন দরজা না ভেঙে সকালে বাসায় ঢোকে। কিন্তু পুলিশ দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে ইয়ামিনকে আটক করে। তারা নুরকে আটকের কোনো চেষ্টা করেনি।”
তিনি বলেন, " একই রাতে ইয়ামিনের বাবা এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল হাসানকেও আটক করা হয়। তবে পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।”
মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রাজিব আল মাসুদ সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, "ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে ২১ জুলাই একটি ভাঙচুরের ঘটনার মামলায় আটক করা হয়। নুর তাকে তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছিল৷ তাই তার বাসায় অভিযান চালানো হয়।”
নুরের বাসায় ভাঙচুর, সিসিটিভির বিভিন্ন সরঞ্জাম ও মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "নুর এসব বানিয়ে বলছেন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। পুলিশ অভিযানের সময় এমন কিছুই করেনি।”
বুয়েটের ছাত্রদের জামিন
এদিকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার করা বুয়েটের ৩১ জন শিক্ষার্থীকে সুনামগঞ্জের আদালত জামিন দিয়েছেন ।তারা বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থী। বুধবার দুপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. ফারহান সাদিক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। মোট ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছিল। বাকি তিন জনের দুইজন এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবেন। পুলিশ দাবি করেছে ওই ৩১ জনের মধ্যে দুইজন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী।
তাহিরপুর থানা পুলিশ তাদের আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করে পাঁচ দিনের রিমান্ডেরও আবেদন করেছিল। আটকের দিন পুলিশ দাবি করে, তারা সবাই ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মী। তাদের গোপন বৈঠক থেকে আটক করা হয়।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, তারা টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণের পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটানো, জনসাধারণের জান-মালের ক্ষতি করার জন্য গোপন ষড়যন্ত্র এবং ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমুলক একটি বৈঠক করেন।
তবে আটক শিক্ষার্থী গালিব আম্মারের ভাই আলী হাসান জুনায়েদ দাবি করেন, "তাদের অযথাই আটক করা হয়েছিল। তারা ঢাকা থেকে সবাই একসঙ্গে না গেলেও হাওরে গিয়ে তাদের সবার দেখা হয়। এরপর তারা একসঙ্গে টাঙ্গুয়া হাওরে ঘুরতে যায়, সেখান থেকে পুলিশ তাদের সবাইকে আটক করে। আমার ভাই আমাকে বলেই ঘুরতে গিয়েছিল। তারা একই বিভাগের নয়, বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র।”
তার দাবি, "পুলিশ তাদের কাছে কোনো ‘ডকুমেন্ট' পায়নি। পুলিশ বলেছে, তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে আর তার ভিত্তিতেই মামলা করেছে।”
আরেক শিক্ষার্থী সাকিব শাহরিয়ারের বাবা মো, জামাল উদ্দিন এখন সুনামগঞ্জে অবস্থান করছেন। তিনি দাবি করেন, "শিক্ষার্থীদের আটক করার পর তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে কিছু লেখা গুগল থেকে ডাউনলোড করে তাই আলামত হিসেবে দেখিয়ে মামলা করা হয়। আমার ছেলে ঠিকমতো বাজারও করতে পারে না। সে কীভাবে জঙ্গি তৎপরতায় জড়াবে?”
তিনি বলেন, "আমাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে পুলিশ যে ধারায় মামলা দিয়েছে, তাতে তারা অনেক ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই আমাদের এখন দাবি- তাদের বিরুদ্ধে মামলা যেন প্রত্যাহার করা হয়। আর যেন কারো বিরুদ্ধে এরকম হয়রানিমুলক মামলা না হয়।”
তবে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, " তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই আটক করা হয়েছে। তারা জঙ্গি ও নাশকতার মতো কাজে উদ্বুদ্ধ। আমরা তাদের কাছ থেকে ডকুমেন্টও উদ্ধার করেছি।” তবে সেই ডকুমেন্টগুলো কী আর কী প্রমাণ আছে জানতে চাইলে তিনি তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না বলে জানান।