রাতভর আমফানের তাণ্ডবে ১২ জনের মৃত্যু
২১ মে ২০২০ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন উপকূলের ১০ লাখ মানুষ৷
এখন পর্যন্ত ঝড়ে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷ এর মধ্যে তিনজন করে পিরোজপুর ও যশোরে, পটুয়াখালীতে দুজন এবং ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ভোলা ও বরগুনায় একজন করে মারা গেছেন৷ তাদের বেশিরভাগই ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে মারা পড়েছেন৷
ঝড়ে খুলনার কয়রা উপজেলায় প্রায় ১৪ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ কয়েকটি জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে নোনা পানিতে বাড়িঘর ও ফসলের জমি প্লাবিত হয়েছে৷ নোনাপানিতে গাছপালা ও জমির ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ কোথাও কোথাও সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷
বাংলাদেশে যে কয়েকটি জেলায় ঘূর্ণিঝড় আমফান সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে তার একটি উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা৷ বুধবার রাত নয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের গতিতে সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে৷ এ সময় ঝড়ের সঙ্গে ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল৷ জেলার অনেক জায়গায় পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তৃর্ণ অঞ্চল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ ফলে এখনো ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না৷
বাংলাদেশে মূলত সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালী উপকূলে ঝড়ের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি৷ পটুয়াখালীতে গাছ পড়ে এক শিশু মারা গেছে৷ এছাড়া নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) এক সদস্যের মরদেহ সকালে উদ্ধার করা হয়েছে৷
স্থলভাগে উঠে আসার পর রাতভর প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে ঘূর্ণিঝড় আমফান এখন দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে৷
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার সকালে জানান, আমফান এখন স্থল নিম্নচাপের রূপ নিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থান করছে৷ দেশের সমুদ্র বন্ধরগুলোকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে৷
বঙ্গোপসাগরে শতাব্দীর প্রথম ‘সুপার সাইক্লোন' এ পরিণত হওয়া আমফান উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার সময় শক্তি কিছুটা ক্ষয় হয়ে আবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পরিণত হয়েছিল৷ ঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় বুধবার সকালে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছিল বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস৷
বুধবার দুপুরের পর সেটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে৷ কলকাতার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার সময় বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটারের মত৷ বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে প্রবেশ করে৷ সন্ধ্যা ৭ টায় সাতক্ষীরায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার৷
যশোর-ঝিনাইদহ পেরিয়ে এটি এখন দেশের উত্তরাঞ্চেলে স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে৷ দিনভর এর প্রভাবে বৃষ্টি থাকবে৷ আরও বৃষ্টি ঝরিয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে হতে এটি অস্তিত্ব হারাবে৷
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আমফানের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ২০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ ঈশ্বরদীতে রেকর্ড করা হয়েছে ১৬০ মিলিমিটার, ঢাকায় ৭৪ মিলিমিটার৷
শুক্রবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি বর্ষণ (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে অধিদপ্তর৷
এসএনএল/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)