রাজ্যপাল যখন ‘অদরকারি’
১৮ নভেম্বর ২০১৯ভারতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক কখনোই মধুর নয়, যখন দুটি আলাদা রাজনৈতিক দল দু'জায়গায় ক্ষমতায় থাকে৷ ঠিক তেমনই বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল পদটিও রাজ্য সরকারের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে৷ কাজেই পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং মমতা ব্যানার্জি সরকারের মধ্যে যে লাগাতার বিরোধ বাধছে, তা আদৌ নতুন কিছু নয়৷ সর্বভারতীয় প্রেক্ষিতেও একই ঘটনা ঘটে চলে৷ সদ্য মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সে রাজ্যের অন্যতম ক্ষমতাশালী দল শিবসেনার কোপে পড়েছে৷ অভিযোগ সেই একই৷ রাজ্যপাল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির ইশারায় কাজ করছেন৷ তার আগে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচিত বিধানসভা ভেঙে দেওয়া এবং রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশের ক্ষেত্রেও মূল অভিযোগ ছিল রাজ্যপালের বিরুদ্ধেই৷ পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কয়েকমাস ধরে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজের অভিযোগ আনছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস৷
একসময় এই অভিযোগ চিরস্থায়ী ছিল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, যেহেতু স্বাধীনতার পর থেকে তারাই সবথেকে বেশি সময় কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার ৩৪ বছরে লাগাতার বিরোধ ছিল রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপালের৷ স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যপাল পদের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্যপালকে তাঁর কাজ করতে দেওয়া উচিত৷ তা না করে ক্রমাগত রাজ্যপালের পেছনে লেগে থাকার একটাই অর্থ আর তা হলৈা, তিনি রাজ্য সরকারের যেসব দোষত্রুটি দেখিয়ে দিচ্ছেন, তা শাসকদলের পছন্দ হচ্ছে না৷ কিন্তু সেটা রাজ্যপালের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে৷
মজার কথা হচ্ছে, আজকে যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, সেই মমতা ব্যানার্জি যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন তাঁর বিভিন্ন প্রতিবাদ, আন্দোলনে তৎকালীন রাজ্যপালের উপস্থিতি এবং সমর্থনকে তিনি স্বাগত জানিয়েছিলেন৷ আজ ঠিক সেটাই তাঁর পছন্দ হচ্ছে না৷
‘‘সেই কারণেই মমতা ব্যানার্জির কোনো অধিকার নেই রাজ্যপালের সমালোচনা করার৷ কারণ একসময় তিনি নিজেই রাজ্যপালের পদটিকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন,’’ বললেন সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য এবং প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী৷ বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকতে কেন্দ্রের সঙ্গে তাদের বিরোধ এবং রাজ্যপালের ভূমিকায় অখুশি বামেরা তখনই বলত, কেন্দ্রের হয়ে নজরদারি এবং খবরদারি করার জন্য রেখে দেওয়া এই পদটির কোনো দরকারই নেই৷ এদিনও সুজন চক্রবর্তী ঠিক সেটাই বললেন৷ তবে তাঁর বক্তব্য, সাধারণ মানুষ এসব সঙ্ঘাত এবং সাংবিধানিক বিরোধ বোঝে না৷ তাঁদের সমস্যা রুটিরুজির৷ কেন্দ্র-রাজ্য কাজিয়ায় সেটাই ফাঁকি পড়ে যাচ্ছে৷