রাজাকারের তালিকায় কোনো ফাঁক থাকবে না তো?
১৩ ডিসেম্বর ২০১৯এক দশক আগে যখন একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, তখন থেকেই রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি উঠতে থাকে৷ রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের এ বছরের মাঝামাঝি জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ কিন্তু পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে জেলা প্রশাসকরা সে সময় বেশ কয়েক রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন৷
চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি ছিল ৪৮ বছর আগের ঘটনার যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না৷ দ্বিতীয়ত, সে সময়কার বাংলাদেশের বিশটি জেলার প্রশাসকের কার্যালয়ে পাকিস্তান সরকারের ভাতা নেয়াদের তালিকাও পুরোপুরি মিলছে না৷ তৃতীয়ত, দেশ স্বাধীন হবার পর যাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়েছে, সে সংখ্যাও খুব বেশি নয় (যুগান্তর, অক্টোবর ২০১৯)৷
এর বাইরে জড়িতদের অনেকেই মারা গেছেন- এটিও একটি কারণ৷ আর যারা জীবিত রয়েছেন তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ কারও কারও মৃত্যুদণ্ডসহ নানা মেয়াদে শাস্তি হয়েছে৷ আবার কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন৷
এছাড়া স্থানীয়ভাবে যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে, এর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণেও আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এ অবস্থায় এসব বাধা ডিঙ্গিয়ে একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা জরুরি৷
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই তালিকা হতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত৷ কারণ, এটা ইতিহাসের অংশ৷ আমরা দেখেছি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বার বার কাজ হয়েছে৷ কিন্তু আজও এর পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা সম্ভব হয়নি৷ তালিকায় শুধু বারবার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাই বেড়েছে৷ তারপরও পেশাগত কাজে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ আজও সনদ পাননি বা নেননি৷ তালিকায় ঠাঁই হয়েছে কি হয়নি তা জানেন না৷ তাই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার যেমন ঠাঁই হয়নি, সেটা যে কারণেই হোক না কেন, তেমনটি যেন এই তালিকার ক্ষেত্রে না হয়৷ রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা জরুরি৷ কেউ যেমন বাদ না পড়েন, তেমনি ভুল করে কারও নাম যেন চলে না আসে৷
আরেকটি বিষয় হলো, বেতনভুক্ত রাজাকার ছাড়াও আরো যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? এ বিষয়টিও পরিষ্কার করা দরকার৷ কারণ, সাধারণভাবে রাজাকার বলতে একাত্তরে সাধারণভাবে যারা পাকবাহিনীকে সমর্থন করেছিল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হয়েছিল, তাদের বোঝানো হয়ে থাকে৷
গেল মে মাসে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির যে বৈঠকটি হয়েছিল সেখানে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যদের আসনগুলো অবৈধভাগে শূন্য ঘোষণা করে তাদের জায়গায় যাদের সংসদ সদস্য করা হয়েছিল তাদের নামও তালিকায় যুক্ত করার কথা বলা হয়৷ এছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল৷ চূড়ান্ত তালিকায় এসবও রাখা হবে কি না তা পরিষ্কার নয়৷ তবে সবচেয়ে বড় কথা এ তালিকা ইতিহাসের দায়মুক্তির তালিকা৷ এখানে ভুল গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাই তাড়াহুড়ো করে তা প্রণয়ন করা ঠিক হবে না৷ প্রয়োজন হলে আরো সময় নেয়া যেতে পারে৷