রাজনৈতিক দলের বিদেশ শাখার যত কৌশল
২০ ডিসেম্বর ২০১৯প্রবাসে রাজনীতি করেন এরকম কমপক্ষে ৩৪ জন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিলর৷ ডেলিগেটও হয়েছেন অনেকে৷ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ আছে৷ আবার ইইউ'র ১৬টি দেশেও আলাদা কমিটি আছে৷ প্রতিটি দেশের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর৷ এই ৩২ জন বাদে ইইউ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও কাউন্সিলর৷ এর বাইরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যেহেতু বাংলাদেশি নগারিক বেশি, তাই ওই দুই দেশ থেকে একটু বেশি কাউন্সিলর করা হয়৷ আর মালয়েশিয়া, জাপান, সৌদি আরবের মতো দেশ থেকে সম্মেলনে ডেলিগেট করা হয়েছে৷'' তাদের বড় একটি অংশ এখন ঢাকায় এসে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন৷
তিনি জানান, ‘‘বিদেশেও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়৷ তবে কমিটির অনুমোদন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকেই নিতে হয়৷ বিদেশ কমিটির কাউন্সিলের সময় বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যান৷’’
কিন্তু নির্বাচন কমিশন আইনে কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে শাখা বা অফিস খোলায় নিষেধাজ্ঞার প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, ‘‘সে কারণেই এসব কমিটি অনুমোদন এবং গঠন করা হয় আনঅফিসিয়ালি৷ অফিসিয়াল কোনো অনুমোদন থাকে না৷ মৌখিকভাবে করা হয়৷ আর আমাদের দলের গঠনতন্ত্রেও আওয়ামী লীগের বিদেশ বা প্রবাস শাখার কোনো বিধান নেই৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘প্রবাসে বাংলদেশ আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নাই৷ আছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, জাপান আওয়ামী লীগ... এভাবে৷ তারা ওই দেশের আইনের আওতায় কাজ করে৷ অফিসিয়ালি তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাখা নয়৷ তারা আমাদের আদর্শ অনুযায়ী প্রবাসে আমাদের সাথে কাজ করতে চান, তাই আমরা মৌখিক অনুমোদন দেই৷’’
বিদেশে এভাবে সংগঠনের প্রয়োজন কেন জনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আসলে এতে আওয়ামী লীগের তেমন লাভ হয় না৷ সবাইকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখাই এর উদ্দেশ্য৷’’
তবে এমন অনেক প্রবাসী নেতা আছেন যারা দেশেও রাজনীতি করেন৷ দেশের কমিটিতেও আছেন৷ আওয়ামী লীগে এরকম দু’জন সংসদ সদস্য হলেন টাঙ্গাইলের ছোট মনির এবং ফেনীর রহিমুদ্দিন৷ এ প্রসঙ্গে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এরকম অনেকেই আছেন যারা একই সঙ্গে দেশে এবং প্রবাসে আওয়ামী লীগ নেতা৷’’
অন্যদিকে বিএনপি'র গঠনতন্ত্রেও বিদেশ বা প্রবাস শাখার কোনো বিধান নেই বলে জানান বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স৷ তবে বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, প্রবাসীরা যে দেশে থাকেন, সেই দেশের আইন-কানুন মেনে যদি বিএনপি’র আদর্শ ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোনো সংগঠন করতে চান, করতে পারবেন৷ এমরান সালেহ বলেন, ‘‘আমরা আরপিও মেনেই কাজ করি৷ তাই আমাদের কোনো বিদেশ শাখা নেই৷ যারা আছেন, তারা ওইসব দেশে স্থানীয়ভাবে কাজ করেন৷ তারা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম৷’’
তিনি জানান, ‘‘ইউরোপ ও অ্যামেরিকার প্রায় সব দেশেই বিএনপির এরকম সংগঠন আছে৷ সৌদি আরবসহ এশিয়ার অধিকাংশ দেশেও সংগঠন আছে৷’’ তবে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কায় কোনো শাখা নেই বলে জানান তিনি৷
বিদেশে এ ধরনের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন থাকলে কী লাভ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যারা সংগঠন করেন, তারা বিএনপির আদর্শ ও উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত৷ বিদেশে তারা এর মাধ্যমে সংগঠিত থাকতে চান৷ আর বিএনপি তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে৷ নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করতে পারে৷’’
বিএনপির প্রবাস সংগঠনগুলো নেতৃত্ব নির্বাচন হয় সেখানে কাউন্সিল বা সম্মেলনের মাধ্যমে৷ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ থেকে বিএনপি নেতারা সেখানে যান৷ কমিটিকেও মৌখিক অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি৷
বিএনপিরও অনেক নেতা আছেন, যারা একইসঙ্গে দেশে এবং প্রবাসে রাজনীতি করেন৷ আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যাসনসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, যারা প্রবাসেই থাকেন৷ তবে তারা কোনো প্রবাসী সংগঠনের নেতা নন বলে জানান এমরান সালেহ প্রিন্স৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷