ক্ষতি ১১ হাজার কোটি টাকা
৬ জুন ২০১৪বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জাতীয় সংসদে আড়াই লাখ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করেন, তার বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকার৷ ফলে বাজেট ঘাটতি ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশ৷
বাজেটে ঘাটতি অবশ্য কিছুটা কমবে অনুদানের হিসাব করলে৷ প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৬ কোটি টাকার অনুদান পওয়া যাবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে, যা হলো ৬১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা৷ শতকরা হিসাবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ৷
বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা আর অনুন্নয়নমূলক খাতে ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা৷ এছাড়া, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন (এডিপি) ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে৷
এডিপি-তে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মিলে মানবসম্পদ খাতে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে৷ সার্বিক কৃষিখাতে অর্থাৎ কৃষি, পল্লি উন্নয়ন ও পল্লি প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মিলে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ৷ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ৷
তাছাড়া সড়ক, রেল, সেতু ও যোগাযোগসংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত মিলে যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ৷ আর অন্যান্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ৷
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে ১ হাজার ১৯০ মার্কিন ডলার হয়েছে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০৷
উল্লেখ্য, ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৫৪ মার্কিন ডলার বা ৮৪ হাজার ২৮৩ টাকা৷
২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৭ দশমিক ৩ শতাংশ৷
এক বছর আগে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আশা ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করেছিলেন৷ কিন্তু তা অর্জন করা যায়নি, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ০১ শতাংশ৷
বলা বাহুল্য, নতুন বাজেটের কর প্রস্তাব পাশ হলে বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়বে৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে –মোবাইল ফোন সেট, চিনি, স্টিল, রড, গ্যাস সিলিন্ডার, বিটুমিন, বাইসাইকেলের টিউব, সেমি স্বর্ণালঙ্কার, অ্যালোমিনিয়াম ফয়েল, ফ্যানের মটর, এনার্জি সেভিং বাল্ব ইত্যাদি৷ আর কমছে প্রাইভেট কার, সব ধরনের প্রসাধনী, সুগন্ধি, সাবান, আসবাবপত্র, দরজা-জানালা, অ্যালুমিনিয়াম স্যানেটারি ওয়্যার প্রভৃতির দাম৷
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘‘বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথগতির মধ্যেও আমরা সন্তোষজনক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পেরেছি৷ গত অর্থবছরের দ্বিতীয়ভাগে ভাগে হরতাল অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও আমরা ৬ দশমিক ০১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি৷''
অর্থমন্ত্রী বলেন, এর পেছনে শিল্পখাতে প্রায় ১০ প্রবৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিগত অর্থ বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি হয়েছে ১১,০০০ কোটি টাকা৷ তার ওপর রজস্ব আদায়ও কমেছে৷
ওদিকে বিএনপি এই বাজেটকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছে৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যে সরকারের বৈধতা নেই তার বাজেটেরও বৈধতা থাকতে পারে না৷