ভারতে ঐতিহাসিক রায়
১২ জুলাই ২০১৩ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, কোনো সাংসদ বা বিধায়ক যদি নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁর দু'বছর কিংবা তার বেশি মেয়াদের সাজা হয়, তাহলে তাঁর আইনসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে৷ উচ্চ আদালতে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার যুক্তি গ্রাহ্য হবে না৷ এক জনস্বার্থ মামলায় এই রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ, গণতন্ত্রের পক্ষে যাকে একটি নতুন মাইলফলক বলছেন অনেকেই৷ সামাজিক আন্দোলনকারীদের মতে, জন প্রতিনিধিত্ব আইনের এবং সংবিধানের ৮ (৪) ধারার সুযোগ নিয়ে বহু সাংসদ এবং বিধায়ক বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে যাচ্ছেন৷
রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ভারতের মতো উন্নয়নমুখী দেশগুলির এক বড় সমস্যা, সেটা কোনো দলই অস্বীকার করতে পারে না৷ সংসদের ভেতরে বাইরে এই ইস্যু নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি৷ ছবিটা কিন্তু পাল্টায়নি৷ পেশি শক্তি আর অর্থশক্তি অজগরের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে গ্রাস করে নিয়েছে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে৷ পেশি শক্তির দাপটে নিজেদের প্রভাব বাড়ায় রাজনৈতিক দলগুলি৷ বর্তমানে ১৬৩ জন সাংসদ এবং ১৪৬০ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা ঝুলছে আদালতে৷
তবে বিপদ হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীরা অপরাধের চেয়ে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিতে একে অপরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে চাইবে৷ ধরা যাক, নিম্ন আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হবার পর দেখা গেল উচ্চ আদালতে সে নির্দোষ৷ সেক্ষেত্রে অনেক সময়ে এমনও হতে পারে যে, ঐ সময়ের মধ্যে আইনসভার মেয়াদই শেষ হয়ে গেল, তাহলে কী হবে? দ্বিতীয়ত, নিম্ন আদালতের রায় জনগণের রায়কে উল্টে দিলে সেটা কী গণতন্ত্রের পক্ষে কাঙ্খিত হবে? আইনসভায় শাসক দল যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, তাহলে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়৷
সব থেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় ৪০৩ জন বিধায়কের মধ্যে ১৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে খুন, ডাকাতি, অপহরণ, তোলাবাজি এমন কী ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগে৷ ১৯০ জন বিধায়কের মধ্যে সমাজবাদী পার্টির ১১১ জন, বহুজন সমাজ পার্টির ২৯ জন, বিজেপি ২৫ জন এবং কংগ্রেসের ১৩ জন৷ শুধু তাই নয়, সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা মুলায়েম সিং, বহুজন সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেত্রী মায়াবতী, এআইএডিএমকের শীর্ষ নেত্রী জয়ললিতার বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলা চলছে অনেক আগে থেকেই, তাই এই রায় অবশ্য তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হবে না৷
গণতন্ত্রের শুদ্ধিকরণের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সক্রিয়তায় অনেক নেতা ভ্রু কুঁচকিয়েছেন৷ কিন্তু রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন রুখতে এই রায়কে দু'হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছে প্রকৃত গণতন্ত্রকামী সুশীল সমাজ৷ কিছুদিন আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আনার পক্ষে রায় দেন এবং নির্বাচনি ইস্তেহারে গালভরা প্রতিশ্রুতি দেয়া নিয়েও আঙুল তোলেন শীর্ষ আদালত৷