রাঙামাটিতে উচ্ছেদের ভয়
১২ জানুয়ারি ২০১৫জেলা প্রশাসন কারফিউ আর ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ আর এরই মধ্যে অন্তত ৩৫ জন পাহাড়ি আদিবাসীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ গণগ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আছেন পাহাড়িরা৷
‘‘রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে স্থানীয় মানুষের কোনো মতামত নেয়া হয়নি৷ আলোচনা করা হয়নি জেলা পরিষদ বা আঞ্চলিক পরিষদের৷ যা ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন৷ এখানে এই দু'টি প্রতিষ্ঠান হলে শত শত পাহাড়ি আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদ হবে৷ তারা তাদের ভিটে মাটি হারাবেন,'' – এই অভিযোগ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামটি জেলা সভাপতি বাচ্চু চাকমার৷
তিনি ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘আগেই আমরা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি, স্মারক লিপি দিয়েছি৷ তারপরও শনিবার মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনে সরকার অনড় থাকায় আমরা শান্তিপূর্ণ অবরোধের ডাক দেই৷ আর সেই কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে রাঙামাটিকে অশান্ত করে তোলে৷''
বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘আমরা এখন কারফিউ এবং ১৪৪ ধারার মধ্যে আছি৷ রবিবারের কারফিউ সোমবার সকাল ১১টায় তুলে নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ আবার সোমবার সন্ধ্যা থেকে কারফিউয়ের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন৷ এর মধ্যেই গ্রেপ্তার অভিযান চলছে৷ আমরা আশঙ্কা করছি যে কোনো সময় গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু হতে পারে৷'’
শনিবার মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনের পরদিন রবিবার বিকেলে ১১৪ ধারার মধ্যেই রাঙামাটি বনরূপা বাজারে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ জেলা প্রশাসন বলছে, নানা গুজব ছড়িয়ে এই সংঘর্ষে ইন্ধন দেয়া হয়৷ সংঘর্ষের সময় দোকানপাট ভাঙচুর এবং আগুন দেয়া হয়৷ পাহাড়িদের অভিযোগ, চার-পাঁচজন মুখোশ পরা বাঙালি যুবক বনরূপা বাজারের গিয়ে পাহাড়িদের মারধর শুরু করে৷ এ সময় পাহাড়িরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ আর এরপরই কারফিউ-এর ঘোষণা আসে৷
কেন মেডিক্যাল কলেজের বিরোধিতা
রাঙামাটির সাংবাদিক ছত্রং চাকমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাহাড়ি আদিবাসীদের মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের বিরোধিতার মূল কারণ উচ্ছেদ আতঙ্ক৷ এখন রাঙামাটি শহরের জেনারেল হাসপাতালের পাশের একটি ভবনে অস্থায়ীভাবে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হলেও এর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে৷ আর তখন শত শত পরিবার উচ্ছেদ হবে৷'' তিনি জানান, ‘‘রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আগেই শুরু হয়েছে৷ আর জমি অধিগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে রাঙামাটি শহরের কাছে ক্ষেত্তা এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন৷'' তিনি বলেন, ‘‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় এ ধরনের কোনো কাজ করতে হলে তা জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে করার বিধান থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি৷ ফলে পাহাড়িদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘১৯৬০ সালে উন্নয়নের নামে শত শত পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের জমি, বাড়ি-ঘর হুকুম দখল করা হয়৷''
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামটি জেলা সভাপতি বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘রাঙামাটিতে ভালো কোনো প্রাইমারি বা হাই স্কুল নাই, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র খুবই করুন৷ হাসপাতালে চিকিৎসক নেই৷ নার্সিং ইন্সটিউট চলছে না৷ এসবের উন্নয়ন না করে কেন মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের প্রয়োজন পড়ছে, তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ আইনে এই দু'টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হলে তাতে পাহাড়িরা তেমন সুযোগ পাবেনা৷'' তিনি দাবি করেন, ‘‘এরই মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে৷ তার মধ্যে পাহাড়ি মাত্র ৪/৫ জন৷''
বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘আমরা কোনোভাবেই জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে পাশ কাটিয়ে রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে দেব না৷''
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে৷ আর এজন্যই কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ তিনি রবিবার বনরূপা বাজারের সংঘর্ষের পর নতুন করে কোনো হামলা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান৷ তিনি আরও জানান, মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন সরকারের সিদ্ধান্ত এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই৷
শনিবার ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১ টি মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷