যেভাবে চরমে উঠল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
গাজাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের৷ তবে এবছর কয়েকটি বিশেষ ঘটনার ফলে উত্তেজনা চরমে উঠেছে৷
সীমান্তে বোমাবাজি
গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি সীমান্তে একটি বোমা বিস্ফোরণে চারজন ইসরায়েলি সৈন্য আহত হন৷ প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিভিন্ন লক্ষ্যের উপর বিমান হামলা চালায়৷
জাতিসংঘের সাহায্য
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ) গাজা স্ট্রিপের অর্ধেক মানুষের মুখ্য সরবরাহের উৎস৷ ২৫শে ফেব্রুয়ারি তারিখে সংস্থাটি সাবধান করে দেয় যে, গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷ কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউএনআরডাব্লিউএ-র জন্য অর্থসাহায্য বন্ধ করেছে৷ সংস্থাটি পরে জানায় যে, অন্তত জুলাই মাস অবধি গাজায় সরবরাহ চালু থাকবে৷
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী আক্রান্ত
১৩ই মার্চ ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহর গাড়ির বহর গাজায় আক্রান্ত হয়৷ পশ্চিম জর্ডানের ফাতাহ গোষ্ঠীর রাজনীতিক হামদাল্লাহ সচরাচর গাজা সফর করেন না৷ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ঐ আক্রমণের জন্য হামাসকেই দায়ী করেছেন, কেননা হামাস হামদাল্লাহর পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ অপরদিকে হামাসের দাবি যে, ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও সম্প্রীতির হানি ঘটানোর জন্যই ঐ আক্রমণ চালানো হয়েছে৷
ইসরায়েলি বিমান হানা
১৮ই মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণের ফলে কেউ আহত না হলেও, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিমান হানা চালিয়ে হামাসের একটি সুড়ঙ্গ প্রণালী ধ্বংস করে৷ পরবর্তী কয়েক দিনে বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি সীমান্তের ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়৷
সীমান্ত বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা স্ট্রিপের ফিলিস্তিনিরা ঘোষণা করে যে, ইসরায়েল অধিকৃত এলাকাগুলিতে প্রত্যাবর্তনের অধিকারের দাবির সমর্থনে সীমান্তে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে৷ ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের দাবি মেনে নিতে রাজি নয়৷
ভূমি দিবসের পদযাত্রা
ইসরায়েল কর্তৃক ভূমি দখলের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালে আরব প্রতিবাদের স্মরণে ৩০শে মার্চ তারিখটিকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷ এবছর ভূমি দিবসের পদযাত্রায় প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনি অংশগ্রহণ করেন৷ কিছু বিক্ষোভকারী সীমান্তের বেড়া পার হবার চেষ্টা করেন ও ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও অনেকে আহত হন৷
সীমান্তে প্রতিবাদের দ্বিতীয় পর্ব
৬ই এপ্রিল সীমান্তে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও সংঘর্ষে একজন সাংবাদিক ও ন’জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান৷
‘আমরা ওদের ওপর আঘাত হানবো’
৯ই এপ্রিল তারিখে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সীমান্তের কাছে অবস্থিত স্ডেরট শহরে ঘোষণা করেন, ‘‘আমাদের একটি সহজ-সরল নীতি আছে, যা আমরা বারংবার জ্ঞাপন করার চেষ্টা করি৷ যদি কেউ তোমাকে আক্রমণ করে, তাহলে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে আক্রমণ করো৷ আমরা ওদের এই গাজা সীমান্তে আমাদের ওপর আঘাত হানতে দেবো না; বরং আমরা ওদের ওপর আঘাত হানবো৷’’
সীমান্তে বিক্ষোভের তৃতীয় পর্যায়
১৩ই এপ্রিল তারিখে উদ্যোক্তারা সীমান্তের কাছে বিক্ষোভরত জনতাকে ইসরায়েলের পতাকার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে বলেন৷
প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া
১৩ই এপ্রিল সীমান্তের কাছে আহত এক তরুণকে সাহায্য করার জন্য ছুটে এসেছেন তাঁর সঙ্গীরা৷ ৩০শে মার্চ প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন ও শত শত আহত হয়েছেন৷