যে স্কুলে ভালো নম্বর পাওয়াটা বড় কথা নয়
১০ ডিসেম্বর ২০১৪বোখুম-এর ভিডার স্কুলে টিফিনের ছুটি৷ এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় কতো নম্বর পেল, পরের ক্লাসে প্রোমোশন পাবে কিনা, সে সব নিয়ে মাথা না ঘামিয়েই পড়াশুনা করতে পারে৷ তারা নিজের থেকেই শেখে, নিজের গরজে এবং নিজের দায়িত্বে৷ শিক্ষক হলেন তাদের গাইড – তিনি এমন সব প্রস্তাব দেন, যেগুলো ছাত্রছাত্রীরা কাজে লাগাতে পারে – আবার ইচ্ছে না হলে নয়৷ সব সত্ত্বেও এই সব ছাত্রছাত্রী স্কুলের পড়া শেষ করে ফাইনাল পরীক্ষা দেয় এবং পাশ করে৷ লেখাপড়া করার মজাটা তারা ভোলে না, কেননা তারা দেখে, তারা অসহায় নয়, তাদের মর্জির একটা দাম আছে৷ স্কুল উপদেষ্টা মিশায়েল হারসলেম বলেন:
‘‘শিশুদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হল যে, তারা দেখবে, তারা স্কুলে এবং লেখাপড়ায় নিজেরাই সক্রিয় ও কার্যকরী৷ এই কার্যকারিতার অর্থ যে, আমি দেখছি, আমার সক্রিয়তার ফলে কিছু একটা ঘটছে৷ শিশুদের জন্য এটা গোড়া থেকেই খুব প্রয়োজনীয় যে তারা দেখবে: আমি যদি এখানে সচেষ্ট হই, তাহলে আমি কিছু একটা করতে পারি, বদলাতে পারি৷ আমি যত অনুশীলন করব, ততই আমি ভালো হবো৷''
সবাই শেখে নিজের মতো করে
ক্লাস ওয়ানের ছেলে-মেয়েরা কারিগরি ক্লাসে তরোয়াল তৈরি করতে শেখে৷ এখানে তারা খেলার ছলে সব কায়দাকানুন, রীতিনীতি শেখে৷ দেখা যায়, প্রতিটি শিশুর কাজ করার ধরন আলাদা৷ এই বৈচিত্র্য থেকেই শেখার আনন্দটা বেঁচে থাকে, বলেন মিশায়েল হারসলেম: ‘‘শেখার আনন্দটা বাঁচিয়ে রাখার সেরা পথ, ছোটদের তাদের নিজেদের মতো করে শিখতে দেওয়া৷ তার অর্থ, শিক্ষক হিসেবে আমাকে ক্লাসে নানা ধরনের শেখার পদ্ধতি অ্যালাউ করতে হবে – যা বহু শিক্ষকের পক্ষে সমস্যাকর হয়ে দাঁড়ায়৷''
নিজের শেখার পদ্ধতিটা আবিষ্কার করার অর্থ, পাঠ্য বিষয় অনুধাবন করার নিজস্ব উপায় উদ্ভাবন করা; নিজের কার্যক্রম উদ্ভাবন করা – যেমন হয়তো একটা ভিডিও ফিল্ম তৈরি করা৷ ভিডার স্কুলের ওয়ার্কশপগুলোয় ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই খুঁজে বার করে, তারা কোন বিষয় নিয়ে কাজ করতে চায়৷ এই পন্থায় তারা নিজেরাই ঠিক করে, তারা কী শিখবে৷ হারসলেম বলেন:
‘‘আসলে সব ছাত্রছাত্রীরাই জানে, তারা কী শিখতে চায় – যদি তাদের কী শেখা উচিত, সেটা আমরা বড়রা বলে কিংবা বেঁধে না দিই৷ ওদের স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ ও কৌতূহল হলো এই বিশ্বকে নিয়ে, কেননা ছোটরা চিরকালই দুনিয়াটাকে চিনতে চায়, আবিষ্কার করতে চায়৷ এবং সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই একটা ধারণা আছে, সে বিশ্বটাকে কীভাবে আবিষ্কার করবে৷ এবং আমি যদি তার অনুমতি দিই, তাহলে ছাত্রছাত্রীরা আনন্দ করেই শেখে৷''
শিক্ষার বাই-প্রোডাক্ট
ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের খুঁজে নিতে দিলে তারা যে গাছপালা লাগানো, ছবি আঁকা কিংবা গল্প লেখার মতো ‘বিষয়' পছন্দ করবে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷ কিন্তু তা থেকে কি কিছু শেখার আছে? ও সব করে কি ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যে-বুদ্ধি বাড়বে? হারসলেম-এর মত হলো: ‘‘জ্ঞানটা হল শিক্ষার একটা বাই-প্রোডাক্ট, শিক্ষা থেকে উপজাত একটা ফসল৷ অপরদিকে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের জন্যে শেখার কতগুলো কৌশল বার করা এবং খেয়াল রাখা, কোন কৌশলগুলো আমার সঙ্গে খাপ খায়, কোন কৌশল দিয়ে আমি অজানা বিশ্বের কয়েকটা অচেনা এলাকা জয় করতে পারি৷''
সাধারণ পড়াশুনার বিষয়গুলিতেও নিজের শেখার কৌশল কাজে দেয়৷ এক্ষেত্রে কী এবং কতটা শিখতে হবে, তা বলে দেওয়া আছে বটে; তা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বিষয়টির সঙ্গে খানিকটা নিজেদেরই পরিচিত হতে হয়৷ শিক্ষক যদি ছাত্রছাত্রীদের তাদের নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী পড়াশুনা করার অনুমতি দেন, তাহলে আশ্চর্য সব ব্যাপার-স্যাপার ঘটতে পারে৷ যেমন রুশ ভাষা শেখার ক্লাসে৷ হারসলেম শোনালেন সে কাহিনি:
‘‘ছাত্রছাত্রীরা টেলিভিশনে রুশ পপ গোষ্ঠী পুসি রায়ট-এর খবর শুনেছে এবং সে বিষয়ে আরো জানতে চায়৷ শিক্ষকের সেটা কাম্য না হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছাত্রছাত্রীদের তা করতে দেন – ছাত্রছাত্রীরা পুসি রায়ট-কেই প্রোজেক্ট হিসেবে বেছে নেয়৷ এবং সেটা পাঠ্যবইতে যা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি শক্ত রুশ ভাষায়! এবং এই অনেক বেশি শক্ত টেক্সট তারা নিজেরাই আগ্রহ করে শিখেছে৷ সেক্ষেত্রে ওরা সাধারণ পাঠ্যক্রমের চেয়ে অনেক বেশি নতুন শব্দ ও ব্যাকরণ শিখেছে৷''