অগ্রগতি কম, স্তব্ধতা বেশি
২৯ জুন ২০১৪জার্মানি জ্ঞানকেন্দ্রিক সমাজের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ অন্তত শিক্ষাজগতের দিকে দৃষ্টি দিলে এই কথাই মনে হবে৷ গত বছর প্রথমবারের মতো পেশাগত শিক্ষার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন বেশি শিক্ষার্থী৷ সম্প্রতি বার্লিনে উপস্থাপিত ২০১৪ সালের জাতীয় শিক্ষা-রিপোর্টে এই তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে৷
প্রতিবেদনের লেখকরা সিস্টেমে একটা ‘গতি' এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন৷ অন্যদিকে একটা ‘স্থির' অবস্থাও বিরাজ করছে বলে জানান তাঁরা৷ কেননা এই গতি যথেষ্ট বিস্তৃত নয়৷
যেমন ৬০ শতাংশ তুর্কি তরুণীর কোনো পেশাগত শিক্ষা নেই৷ দশ বছর আগে প্রথম শিক্ষা রিপোর্ট বের হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ সমালোচনা করে বলেন গ্যোটিংগেন ইউনিভার্সিটির মার্টিন ব্যাথগে৷ এ জন্য শুধু সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক কারণই দায়ী নয়৷ এক্ষেত্রে জার্মান মালিক ও নিয়োগকর্তাদের ভূমিকাও কম নয়৷ অনেকের মনে অভিবাসীদের ব্যাপারে একট নেতিবাচক বদ্ধমূল ধারণা থাকে৷ আর তাই অভিবাসী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করেন তাঁরা৷ অবশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণেও কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন বিদেশি বংশোদ্ভূতরা৷ তরুণ অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশের পেশাগত ডিগ্রি নেই৷ সারা জার্মানিতে এই হার ১০ শতাংশের মতো৷
ভারসাম্য বজায় রাখা
সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় না থাকলে কর্মজগতে সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দেন শিক্ষা গবেষকরা৷
জার্মানির দ্বৈত শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষানবিশের কাজ ও প্রশিক্ষণ কোর্সের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে৷ এছাড়া তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে জার্মানিতে৷ যা কর্মবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রির প্রবর্তন কর্মক্ষেত্রে কীরকম প্রভাব বিস্তার করে, সেটাও দেখার বিষয়৷ এ সব কারণে দুই সিস্টেমের মধ্যে ‘যাতায়াত ব্যবস্থা' আরো খোলামেলা করতে হবে৷
জার্মানির শিক্ষামন্ত্রীও মনে করেন, বিশেষজ্ঞ শ্রমিকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে৷ অন্যদিকে ডিগ্রি শেষ না করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পেশাগত শিক্ষার পথ খোলা রাখতে হবে৷ এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্জিত ডিগ্রিকে পারস্পরিক স্বীকৃতিপ্রদান৷ ভবিষ্যতে শিক্ষামন্ত্রণালয় এই ধরনের কর্মসূচির জন্য ১৩ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করবে৷
অন্তর্ভুক্ত করা উচিত
প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর কেন্দ্র ও রাজ্যের পক্ষ থেকে শিক্ষারিপোর্ট বের করা হয়৷ বর্তমান রিপোর্টটিতে বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সুযোগ সুবিধা এবং জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী সুস্থ ও শিক্ষাপ্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে ক্লাস করানোর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে৷ বর্তমানে জার্মানিতে মোট স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর ৬.৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় পাঁচ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর বিশেষ শিক্ষার বা স্পেশ্যাল এডুকেশনের প্রয়োজন৷
এদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ ‘বিশেষ স্কুলে' যায়৷ বাকিরা সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করে৷ অর্থাৎ তাদের আলাদা না করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
সুস্থ ও প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের একসঙ্গে ক্লাস করানোর ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলেও কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন ‘স্পেশ্যাল স্কুলগুলিতে' আরো বেশি ছেলে-মেয়ে যায়৷ বলেন রিপোর্ট লেখকদের মুখপাত্র মার্কুস হাসেলবর্ন৷ এছাড়া ভাষা সমস্যার কারণে ‘বিশেষ স্কুলে' বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি৷ এর মধ্যে রয়েছে সার্বিয়া, লেবানন ও আলবেনিয়া থেকে আসা ছেলে-মেয়ে৷
তুলে দেওয়া ঠিক নয়
অবশ্য হাসেলবর্ন স্পেশ্যাল স্কুল তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নন৷ এই প্রসঙ্গে তিনি যুক্তরাজ্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, যেটা বাস্তবসম্মত৷ সেখানে দুই শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী বিশেষ স্কুলে যায়৷ জার্মানিতে এই হার চার শতাংশ, যা খুব বেশি৷
রাজ্যের সংস্কৃতিমন্ত্রীদের প্রেসিডেন্ট সিলভিয়া ল্যোরমান জোর দিয়ে বলেন যে, তিনি শিক্ষার্থীদের ‘বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তির' পক্ষে নন৷ তবে প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিশুরই সাধারণ স্কুল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকার আছে বলে মনে করেন তিনি৷
শিক্ষা প্রতিবেদনটিতে অর্থনীতি সম্পর্কে বলা হয়, এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সুষ্ঠু প্রশিক্ষণনীতি করা হয়নি৷ ধাতব, কারিগরি ও ইলেকট্রনিক ক্ষেত্রে এবং স্বাস্থ্য ও সেবাবিভাগে বহু বছর ধরে শিক্ষানবিশি পদের অভাব রয়েছে৷ তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা৷ শুধুমাত্র খাদ্য, রান্না, হোটেল ও রেস্তোরাঁ বিভাগে শিক্ষানবিশির কাজের প্রাচুর্য রয়েছে৷