1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাইবার যুদ্ধ

আশীষ চক্রবর্ত্তী৯ মার্চ ২০১৩

ঘরে কিংবা সুবিধামতো যে কোনো জায়গায় বসে গোলাগুলি ছাড়া যু্দ্ধ৷ ‘‘ধ্যাৎ, এটা কোনো যুদ্ধ হলো?’’ হবে না কেন? হচ্ছেতো! বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে প্রজন্ম চত্বর সোচ্চার হওয়ার পর থেকে যু্দ্ধ চলছে তুমুল৷

https://p.dw.com/p/17u6Z
ছবি: Fotolia

সাইবার যুদ্ধ কী? কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে এমন প্রশ্ন ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু একই প্রশ্নে এখন যে কেউ প্রশ্নকর্তার দিকেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাববেন, ‘‘ইনি কি দেশের খবর রাখেন না?'' দেশ নিয়ে ভাবেন, খোঁজখবর রাখেন এমন প্রায় প্রতিটি মানুষই জানেন, বাংলাদেশে হরতাল, বিক্ষোভ, জ্বালাও-পোড়াও, সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়ি মন্দিরে হামলা, লুটপাট, হামলার কারণে প্রধানত হামলাকারী এবং পুলিশের মৃত্যু – এসব হয় কোনো কোনো দিন, কিন্তু সাইবার যুদ্ধ চলে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে৷

সীমান্তে বিএসএফের বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের তরুণরা যে ভারতের সঙ্গে সাইবার যুদ্ধে নেমেছিল মনে আছে? মনে আছে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারুণ্য বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর বাতিল করতে কী যুদ্ধ করেছে? সাইবার যুদ্ধ৷ বাংলাদেশ দল এখনো পাকিস্তানে যায়নি৷ বিএসএফ-এর হত্যাযজ্ঞও বন্ধ ছিল কিছুদিন৷

কিন্তু ৪২ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী যে সব অপরাধ হয়েছিল তার বিচার এতদিনেও হয়নি৷ ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করেছে৷ বেলজিয়াম প্রবাসী এক আইনজ্ঞের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে তাঁর স্কাইপে কথোপকথন প্রকাশিত হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন ট্রাইব্যুনালের এক বিচারক৷ তারপর নতুন বিচারক নিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষে রায় ঘোষণা শুরু৷ একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ ব্যাপক মানবাধিকারবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ব্লগাররা৷ শাহবাগে জড়ো হয়ে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ জানাতে থাকলে আপামর জনসাধারণও যোগ দেয় তাঁদের সঙ্গে৷

Symbolbild Hacker Smartphone Computer
ছবি: picture-alliance/dpa

কিন্তু প্রজন্ম চত্বরে জনতার ঢল দেখে জামায়াত এবং তাদের মিত্ররা নেয় মাঠে না নেমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল৷ মুক্তিযুদ্ধের পরও এ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল৷ জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমসহ অনেক অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীই তখন দেশের বাইরে থেকে তখনকার সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন৷ দেশে শত শত মসজিদ ভেঙে ফেলা হচ্ছে – বিদেশি প্রচারমাধ্যমকে এমন বানোয়াট তথ্য দিয়ে তারা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের সহানুভূতি আদায় করেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের ওপরও চাপ এসেছে নানাভাবে৷

২০১৩ সালের এই সময়ে তাদের প্রতিপক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার তরুণ প্রজন্ম এবং সরকার৷ একটা কম্পিউটার আর তার সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগও থাকলে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন, চাইলে আপনিও কিন্তু হতে পারেন সাইবার যোদ্ধা! তবে এই যু্দ্ধে সরকারের অনেক দুর্বলতা চোখে পড়লেও প্রজন্ম চত্বর যুৎসই জবাব দিয়ে যাচ্ছে সব আক্রমণের৷ জামায়াত-শিবির ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করলেও তাঁরা আসলে ধর্ম মানেননা - এ কথা প্রমাণ করতে ফেসবুকে তুলে দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধী এক জামায়াত নেতার ছেলের ছবি৷ লন্ডনে একাধিক বিদেশিনীকে জড়িয়ে ধরে উদ্দাম নৃত্যে ব্যস্ত এক বাঙালি তরুণের সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল চোখের পলকে৷

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে বিরোধীদের সাইবার যুদ্ধে প্রতি মুহূর্তেই আসছে নতুন নতুন চমক৷ মিডিয়াও যু্দ্ধে শরিক৷ জামায়াতের সমর্থক বা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল যু্দ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা, বিচার বন্ধ করার হেন চেষ্টা নেই যা করছে না৷ প্রজন্ম চত্বর সাইবার মিসাইলের জবাবে মিসাইল-অ্যান্টি মিসাইল ছুড়ে চলেছে৷ চটজলদি প্রতিক্রিয়া৷ বিজয়োল্লাস করার আগেই যেন প্রতিপক্ষ পাল্টা আক্রমণে বেসামাল৷

Bangladesh Protest gegen Kriegsverbrecher
শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনকারীদের অন্য অস্ত্র ফেসবুক, টুইটার, ব্লগছবি: REUTERS

তবে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়ানো, হত্যা, নৃশংসতা যদি মানদণ্ড হয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি কয়েকটা বড় ‘সাফল্য' পেয়েছে৷ ফটোশপের কারিকুরি দেখিয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে পাঠিয়ে, নানা কথায় মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে রাতের অন্ধকারে হামলা চালাতে পেরেছে ঘুমন্ত জনপদে৷ পরের দিন স্বাধীনতার পক্ষের অসংখ্য মানুষও পাড়ি জমান চাঁদে (!)৷ ঠিক সেইভাবে, যেভাবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি চাঁদের ছবিতে বসিয়ে বোঝানো হয়েছিল তিনি বিধাতার স্নেহধন্য৷ তরুণরা চাঁদে নিজের ছবি বসিয়ে রঙ্গতামাশা করে বুঝিয়ে দেন ছবি বসিয়ে সবাই চাঁদে যেতে পারেন, তবে যেতে হলে কাউকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হতে হয়না৷

এই লেখা যখন শেষের দিকে তখনই এলো শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে নারী জাগরণ সমাবেশ চলার সময় হাতবোমা বিস্ফোরণের খবর৷ ফেসবুকে ‘শাহবাগে সাইবার যু্দ্ধ' পাতায় ততক্ষণে উঠে গেছে নতুন স্ট্যাটাস, সেখানে লেখা, ‘‘সাইবার যুদ্ধের বুথে বসে পেজে একটা পোস্ট দিচ্ছিলাম৷ ঠিক সেই মুহূর্তে জামাতের ধ্বংসাত্মক দুটি ককটেল ফুটালি আমাদের স্টল ও মূল মঞ্চ থেকে একটু দূরে৷ জেনে রাখ তোরা, যে হাতে কলম চলে, সে হাতে যদি লাঠি উঠে তবে তোদের সমস্ত অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে বালুকণার মতো উড়ে যাবে পাকিস্তানে৷ পালানোর স্থান খুঁজে পাবি না কোথাও!!!! হুশিয়ার সাবধান করে বলে দিতে চাই, আমাদের লেখনীর হাতে লাঠি উঠাতে বাধ্য করিস না!! ---- সাইবার যোদ্ধা''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য