যুদ্ধাপরাধের বিচার দেখে যেতে চান মুক্তিযোদ্ধারা
২২ ডিসেম্বর ২০১১সকল মুক্তিযোদ্ধা একটি দাবিতে অনড়৷ সেটি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাদের বিচার৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃখ, হতাশা এই একটি জায়গায়৷ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন জুগিয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি৷ সেসময় অগুনতি বাঙালি'র মৃত্যুর জন্য তাই সমানভাবে দায়ী তৎকালীন পাকিস্তানের এই বাঙালি দোসররা৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় একাত্তরে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার হয়নি৷
বিচার দ্রুত হোক
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে৷ এদেরই একজন আব্দুর রশীদ৷ যশোরের এই মুক্তিযোদ্ধা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একাত্তর সালে স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা ছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পারবো কিনা, তা নিয়ে মনে আক্ষেপ রয়ে গেছে৷ আমরা চাই যুদ্ধাপরাধের বিচার খুব দ্রুত হোক''৷
বিব্রত ফজলু
ফজলুল হক ভূঁইয়া আখাউড়ার বাসিন্দা৷ তিনি একজন দিনমজুর৷ কখনো রিকশা চালান, আবার জীবিকার তাগিদে ঠেলাগাড়ি ঠেলতেও দেখা গেছে তাঁকে৷ বর্তমান সমাজে তাঁর তেমন কোন পরিচয় নেই৷ তাঁর নেই একটি মুঠোফোন, এমনকি একটি হাতঘড়িও৷ এই ফজলুল হক একাত্তরে ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ৷ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি, বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন, জয়ী হয়েছেন৷
স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের দম্ভিত পদচারণায় বিব্রত হন ফজলু৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন সেকথা৷ একই সঙ্গে দাবি করলেন যুদ্ধপরাধের আশু বিচারের৷ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন করছি ঠিকই৷ কিন্তু স্বাধীনতার বিরোধিতা করেও আজকে রাজাকার, আল-বদর হচ্ছে এদেশের নেতা৷ আল-মুজাহিদ আমাদের ত্রিশজন নৌ-কমান্ডোকে হত্যা করেছে ঈশ্বরদি সেতুর কাছে৷'
জামায়াতে ইসলামি'র বিচার দাবি
বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির৷ একাত্তরে সাত নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন তিনি৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সক্রিয় শাহরিয়ার৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামি'র বিচার দাবি করেন৷ শাহরিয়ার বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামির বিচার করতে হবে৷ রাজাকার, আল বদর বাহিনীর বিচার করতে হবে'৷
দেরিতে হলেও বিচার হোক
মিলি রহমান মুক্তিযোদ্ধা নন৷ একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানে৷ তাঁর স্বামী ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান করাচির মৌরিপুর বিমান ঘাঁটি থেকে একটি জঙ্গি বিমান দখলে করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন৷ লক্ষ্য, নিজেদের দেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা৷ মতিউরের সেই চেষ্টা সফল হয়নি৷ কিন্তু তাঁর সাহসিকতা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, পাকিস্তানকে করে তোলে ভীত সন্ত্রস্ত৷ একাত্তরের আগস্টে মতিউরের মৃত্যুর পর পাকিস্তানে চরম মানসিক নির্যাতনের শিকার হন মিলি রহমান৷ একসময় অবশ্য সন্তানদের নিয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন তিনি৷ মিলি'র এখন একটাই চাওয়া, যুদ্ধাপরাধের বিচার৷ দেরিতে হলেও সেই বিচার হবে, এটাই প্রত্যাশা তাঁর৷
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের উদ্যোগ নেওয়ায় সন্তুষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা৷ শুধু মুক্তিযোদ্ধা কেন, বর্তমান প্রজন্ম থেকে শুরু করে আপামর জনতা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে স্বাগত জানিয়েছে৷ সাধারণ মানুষ রাজনীতি বোঝেনা, বোঝে একাত্তরের পাকিস্তানি দোসরদের বিচার৷ সেই বিচার মৃত্যুর আগে দেখে যাবেন, এমন প্রত্যাশা মুক্তিযোদ্ধাদের৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই