1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রনেতা থেকে নারীনেত্রী মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম

২১ ডিসেম্বর ২০১১

একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র নেতা মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তাঁদেরই একজন আয়েশা খানম৷ পরে আগরতলায় গিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/13WHF
মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানমছবি: BMP

নেত্রকোনা ও দুর্গাপুরের মাঝখানে গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ই অক্টোবর জন্ম আয়েশা খানমের৷ পিতা গোলাম আলী খান এবং মা জামাতুন্নেসা খানম৷ হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পর্ক আয়েশার৷ তবে ১৯৬৬ সাল থেকে ছাত্র আন্দোলনে পুরোপুরি সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি৷ ফলে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের পথে এগিয়ে যেতে যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল সেসবগুলোতেই তিনি সামনের সারিতে ছিলেন৷

১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং সংগ্রামী নেত্রী আয়েশা খানম৷ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি৷ এছাড়া রোকেয়া হলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ফলে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠিত করার দায়িত্ব ছিল মূলত আয়েশা এবং তাঁর সহকর্মী ছাত্র নেতাদের উপর৷ এছাড়া ছাত্র নেতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সচেতনতার কাজেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন তিনি৷ ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি যেটা গঠিত হয়েছিল সেটার উপর দায়িত্ব ছিল সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা৷ ফলে সেই কাজের সাথে বেশি জড়িত ছিলাম৷ এছাড়া বিশেষ করে সাতই মার্চের পর থেকে ঢাকা শহর সংগঠিত করা এবং যোগাযোগ রক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছিলাম৷ সেসময়ের বন্দুক কাঁধে করা একটি ছবি এখন সবাই দেখতে পান সেখানে আমিও রয়েছি৷''

Titel 2 (0031.jpg) : Freiheitkämpferin Ayesha Khanam redet einen Konferenz am International Frauens Tag in Bangladesch Bildunterschrift: Freiheitkämpferin Ayesha Khanam redet einen Konferenz am International Frauens Tag in Bangladesch Text: Freiheitkämpferin Ayesha Khanam redet einen Konferenz am International Frauens Tag in Bangladesch Datum: 08.03.2011 Eigentumsrecht: Ayesha Khanam, Präsident, Bangladesh Mahila Parishad BMP, Dhaka Stichwort: Bangla, bengali, Bangladesh, Bangladesch, Freiheitkämpferin, Ayesha, Khanam, War, 1971, Liberation, Freedom, Fighter,
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানমছবি: Ayesha Khanam

এপ্রিল মাসের শেষদিকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় যান আয়েশা খানম৷ সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ক্রাফটস হোস্টেলে উঠেন তিনি৷ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যাঁরা ভারতে আসতেন, তাঁদের এক অংশের সাময়িক আবাসস্থল ছিল ক্রাফটস হোস্টেল৷ সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে যোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখা, প্রণোদনা দান এবং শরণার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগাতে কাজ করেন আয়েশা এবং তাঁর সহকর্মীরা৷

আগরতলায় তাঁর কাজের কথা বলতে গিয়ে আয়েশা খানম জানান, ‘‘আগরতলায় আমি প্রাথমিক একটা প্রশিক্ষণ নিই চিকিৎসা সেবার উপর৷ এরপর আগরতলার প্রতিটি ক্যাম্পে গিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে আত্মনিয়োগ করি৷ এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানোর আগে তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করা হতো৷ সেখানে তাদের ওরিয়েন্টেশন দেওয়ার কাজ করতাম৷ আমি যেহেতু আগে থেকেই সচেতনতা সৃষ্টির কাজে এবং বক্তৃতা ও কথা বলার ক্ষেত্রে জড়িত ছিলাম সেজন্যই বোধায় সেখানেও আমাকে এ ধরণের কাজেই বেশি করে জড়িত রাখা হয়েছিল৷'' এছাড়া ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন আয়েশা খানম৷

মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয়মাসের নানা স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে একটি তুলে ধরলেন আয়েশা খানম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে যেদিন প্রথম আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় যোগ দিলাম, সেটি ছিল আমার কাছে খুবই স্মরণীয়৷ কারণ আমি সেদিন খুব আনাড়ি হাতে হলেও আহত কিশোর-তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতস্থানগুলো পরিষ্কার করে যখন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছিলাম তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল আমি সত্যিই দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য সরাসরি কোন কাজ করছি৷''

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও নিজেকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, সমান অধিকার ভিত্তিক সমাজ গড়ার কাজে জড়িয়ে রেখেছেন নারীনেত্রী আয়েশা খানম৷ এছাড়া নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কাজ করেন তিনি৷ শুরু থেকেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত৷ প্রথমে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আয়েশা খানম৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান