যুক্তরাজ্য়ে শরণার্থীদের হাউসিংয়ে তাণ্ডব অতি দক্ষিণপন্থিদের
৫ আগস্ট ২০২৪উত্তর ইংল্যান্ডের রোটারহ্যাম শহরে রোববার একদল অতি দক্ষিণপন্থি সমর্থক একটি হোটেলে হামলা চালায়। তাদের অভিযোগ, ওই হোটেলে বহু শরণার্থীকে জায়গা দেয়া হয়েছে। পুলিশ বহুক্ষণের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের সঙ্গে আক্রমণকারীদের রীতিমতো হাতাহাতি হয়।
এই প্রথম নয়, গত সোমবার উত্তর যুক্তরাজ্য়ের একটি অঞ্চলে এক কমিউনিটি সেন্টারে হামলা চালিয়েছিল এক নাবালক। ছুরি নিয়ে সেই হামলায় তিনটিশিশুরমৃত্য়ু হয়েছিল, আহত হয়েছিল আরো আটি শিশু। দুই প্রাপ্ত বয়স্ক নারীও ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। এরপর গুজব রটে যায় ওই নাবালক শরণার্থী। কিছুদিন আগেই সে নৌকা করে যুক্তরাজ্য়ে প্রবেশ করেছে। তারপর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসন-বিরোধী অতি দক্ষিণপন্থিরা বিক্ষোভ শুরু করে। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
রোববার সংঘর্ষ হয় রোটারহ্য়ামে। এদিন রোটারহ্য়ামের হলিডে ইন হোটেলের সামনে জমা হয় বিক্ষোভকারীরা। তাদের অভিযোগ, ওই হোটেলে জায়গা দেওয়া হয়েছে শরণার্থীদের। অভিবাসনপ্রত্য়াশী হিসেবে যারা দীর্ঘদিন ধরে ওই হোটেলে বসবাস করছেন। স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা হোটেলের ভিতর ঢোকার চেষ্টা করছে। পুলিশ ঢাল নিয়ে তাদের বাধা দিচ্ছে।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্য়েই আক্রমণকারীরা হোটেলের ভিতর ঢুকে পড়ে। তারা ভিতর থেকে চেয়ার বার করে তা ভাঙতে শুরু করে। চেয়ার হাতেই তারা মারমুখী হয়ে ওঠে। হোটেলের জানলা ভাঙা হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত একজন অফিসার আহত হয়েছেন।
বিকেলে বার্মিংহ্য়ামেও একটি হোটেলে আক্রমণ চালায় অতি দক্ষিণপন্থিরা। সেখানেও একই অভিযোগ শোনা যায় আক্রমণকারীদের মুখে। প্রশাসনের বক্তব্য়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অতি দক্ষিণপন্থিরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। কোথাও কোথাও পুলিশ কুকুর রাস্তায় নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হচ্ছে।
লিভারপুল, সাউথপোর্টে পুলিশ কারফিউ জারি করেছিল। সেখানে গোটা এলাকাজুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা আছে।
যুক্তরাজ্য়ের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার এই ঘটনাগুলির কড়া নিন্দা করেছেন। তিনি সরাসরি অতি দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠীগুলির দিকে আঙুল তুলেছেন। তার বক্তব্য়, এভাবে ওই গোষ্ঠীগুলি যুক্তরাজ্য়জুড়ে অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সবরকম ব্য়বস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্য়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ''আক্রমণকারীরা মসজিদ আক্রমণ করে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কী চায়। কাউকে ছাড়া হবে না। সকলের বিরুদ্ধে কঠিনতম ব্য়বস্থা নেওয়া হবে।''
বস্তুত, গত শনি এবং রোববারের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে বেশ কিছু জায়গায়, প্রতিবাদ কর্মসূচিও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অতি দক্ষিণপন্থিদের সঙ্গে প্রতিবাদীদের সংঘাত হয়েছে।
ছুরি নিয়ে যে নাবালক আক্রমণ চালিয়েছিল, তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সপ্তাহেই তাকে আদালতে পেশ করা হয়। তবে ওই নাবালকের বিষয়ে খুব বেশি তথ্য পুলিশ জানায়নি। কিন্তু সমাজ মাধ্য়মে তাকে নিয়ে বহু গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তারপরেই একের পর এক আক্রমণের ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)