যাদবপুর বিতর্কের মধ্যে র্যাগিংয়ের অভিযোগ বিশ্বভারতীতে
২২ আগস্ট ২০২৩যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর জেরে বর্তমান ও প্রাক্তনী মিলিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই দাবি করেছে, ধৃত ছাত্র র্যাগিংয়ের শিকার হননি। যদিও পুলিশ মনে করছে, মৃত্যুর আগে র্যাগিংয়ের মুখে পড়েছিলেন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রটি।
তাই এই মামলায় রাজ্যের র্যাগিং বিরোধী আইনের ধারা যুক্ত করতে চায় পুলিশ। সেজন্য তারা আদালতে আর্জি জানিয়েছে। সূত্রের খবর, ছাত্রটিকে মৃত্যুর আগে বিবস্ত্র করে হোস্টেলের লবিতে ঘোরানো হয়। তার উদ্দেশে কটূক্তি করা হয়। এই তথ্য পেয়ে র্যাগিং সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
তদন্তকারীরা দফায় দফায় ঘটনার পুনর্নির্মাণ করছেন। মেইন হোস্টেলের ৬৫ নম্বর ঘরের লাগোয়া বারান্দা থেকে প্রথম বর্ষের ছাত্রটি নিচে পড়েন বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার সেখানে মৃত ছাত্রের মাপ ও ওজনের একটি পুতুল নিয়ে গিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। অভিযুক্তদের দাবি, ছাত্রটি নিজেই বারান্দা থেকে নিচে ঝাঁপ দেয়।। এই দাবি ঠিক কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
যাদবপুরে সিসিটিভি?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রাবাস চত্বরে সিসিটিভি বসানোর দাবি আগেও উঠেছে। সাবেক উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর আমলে ছাত্র সুরক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। গত ৯ আগস্ট প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার মৃত্যুর জেরে সিসিটিভি বসানোর দাবি ফের জোরালো হয়েছে।
সোমবারবিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং বিরোধী কমিটি বৈঠকে বসে। নয়া অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ সিসিটিভির বিষয়ে সবার মতামত জানতে চান। বৈঠকের পরে তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে নীতিগতভাবে সদস্যরা সহমত হয়েছেন। ক্যাম্পাস ও হোস্টেলের কোথায় কোথায় সিসিটিভি বসবে, তা বিশেষজ্ঞেরা ঠিক করবেন। এর পাশাপাশি ছাত্রাবাসে কারা আসছেন, তা নথিভুক্ত করা হবে। আবাসিকদের জন্য পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
র্যাগিং রোখার দাওয়াই
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড তৈরি করা হবে। তাদের গড়ে তোলা হবে কুইক রেসপন্স টিম হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি যারা থাকেন, তারাই এই দলের সদস্য হবেন। র্যাগিং বিরোধী কমিটি যাতে ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, সেটাও চাইছেন কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। সেই নির্বাচন করানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন নতুন অন্তর্বর্তী উপাচার্য।
পুরনো ও নতুন ছাত্রদের একেবারে আলাদা জায়গায় রাখতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে একটি তিনতলা বাড়িতে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এই বাড়িতে এখন কয়েকজন শিক্ষাকর্মী সপরিবার থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত একটি কমিটি পুরো বিষয়টির তদারকি করবে।
বিধানসভায় আঁচ
যাদবপুর বিতর্কের আজ গিয়ে পড়ল বিধানসভায়। মঙ্গলবার এ নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব আনে বিরোধী বিজেপি। তাদের বিধায়করা কালো উত্তরীয় পরেছিলেন।রাজ্যের কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ জন্য রাজ্যপালকে দায়ী করেন। এর প্রতিবাদে
পদ্ম শিবিরের বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন।
অখুশি ইউজিসি
যাদবপুর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসলেও তাদের রিপোর্টে সন্তুষ্ট নয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি। ছাত্র মৃত্যু সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রিপোর্টে খুশি হয়নি তারা। দ্বিতীয় রিপোর্ট সম্পর্কে সংস্থার চেয়ারম্যান জগদীশ কুমার জানিয়েছেন, পরের রিপোর্টটিও পূর্ণাঙ্গ নয়। ফের বিশদ ব্যাখ্যা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হচ্ছে।
বিশ্বভারতীতে 'র্যাগিং'
অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরনা অনশন শুরু করেছিলেন চার ছাত্রী। সোমবার বিকেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগে ফের আলোচনায় বিশ্বভারতী। ফরাসি ভাষার দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে তার তিন সহপাঠী কটূক্তি, গালিগালাজ ও মানসিক হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ। সরাসরি ইউজিসিকে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ছাত্র।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজে ছাত্রাবাসে গিয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেন। পরে উপাচার্যের উপস্থিতিতেই ওই ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের মুখোমুখি বসিয়েও প্রশ্ন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তিন ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে চার ছাত্রী ও তাদের দুই সহপাঠীর অনশন নিয়ে বিশ্বভারতীর দিকে আঙুল উঠেছে। শান্তিনিকেতনের পথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি টাঙিয়ে তারা অনশনে বসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ছাত্রীদের বক্তব্য, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হয়নি। অবস্থানে কাজ না হলে ভবিষ্যতে তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এ সব অভিযোগ নিয়ে তাদের বক্তব্য নিজস্ব ওয়েবসাইটে তুলে ধরেছেন। সেখানে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, যাদবপুর ঘিরে হইচইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক ঘটনা তুলে ধরে বিশ্বভারতীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এটা যাদবপুর থেকে নজর ঘোরানোর চক্রান্ত।
রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কোনো প্রতিষ্ঠানই র্যাগিংয়ের 'অসুখ' থেকে মুক্ত নয়। তা নিয়ে আজ তুমুল বিতণ্ডা হয় বিরোধী দলনেতা ও শিক্ষামন্ত্রীর। শিক্ষাবিদ ও প্রেসিডেন্সির সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "বাংলার রাজনীতি মূল্যবোধহীন হয়ে গিয়েছে। তাই তরুণ সমাজের মধ্যেও মূল্যবোধের অভাব। ছাত্ররা মূল্যবোধ হারিয়েছে। তবে এ জন্য শুধু ছাত্ররা নন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও দায়ী।"