যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসের জন্যও পুটিন দায়ী?
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩শুধু ইউক্রেনের উপর বর্তমান হামলাই নয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ আনা হলো৷ ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আকাশে মালয়েশিয়ার যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসের জন্যও তাকে পরোক্ষভাবে দায়ী করা হলো৷ যে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এমএইচ১৭ উড়াল ধ্বংস করা হয়েছিল, পুটিন ব্যক্তিগতভাবে সেগুলি ইউক্রেনের পূর্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে তদন্তে দাবি করা হয়েছে৷ আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী বিমানটি ইউক্রেনের আকাশে রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভেঙে পড়ায় বিমানের ২৯৮ যাত্রী ও বিমানকর্মী নিহত হয়েছিলেন৷
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর তদন্তকারী দল অবশ্য যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে পুটিন-সহ অন্যান্য সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেশ করতে পারেন নি৷ ফলে তদন্ত আপাতত বন্ধ রাখতে হচ্ছে৷ নেদারল্যান্ডসের কৌঁসুলি ডিগনা ফান ব্যোৎসেলায়ের বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পর্যায়ে, অর্থাৎ পুটিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘বাক টেলার’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ইউক্রেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, এমন একাধিক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ কিন্তু এমন সন্দেহের পক্ষে চূড়ান্ত ও আইনসম্মত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি৷ তদন্তকারীদের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, আদের মতোই রুশ ফেডারেশনকে দায়বদ্ধ করা হবে৷ নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ উল্লেখ্য, গত প্রায় তিন মাস আগে নেদারল্যান্ডসের এক আদালত দুই রুশ ও এক ইউক্রেনীয় নাগরিককে দোষী সাব্যস্ত করে৷ তাদের অবশ্য আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় নি৷
২০১৪ সালে হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল ও পূবের কিছু এলাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে এনেছিল রাশিয়া৷ সেই সময় ডনবাস অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল মস্কো৷ কিন্তু এমএইচ১৭ উড়াল ধ্বংসের জন্য যাবতীয় দায় অস্বীকার করে এসেছে সে দেশ৷ তদন্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হিসেবে বর্ণনা করে রাশিয়া তা মেনে নেয় নি৷
ডাচ তদন্তকারীরা অবশ্য আড়ি পেতে রেকর্ড করা একটি টেলিফোন কল শুনিয়ে পুটিনের এক উপদেষ্টার বক্তব্য তুলে ধরেছেন৷ তাতে শোনা যাচ্ছে, যে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত একমাত্র এক ব্যক্তি নিতে পারেন৷ তিনি ফ্রান্সে এক শীর্ষ বৈঠকে ব্যস্ত আছেন৷ আরেকটি কলে পুটিন নিজে লুগানস্ক অঞ্চলের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে ‘সামরিক সরঞ্জাম' সম্পর্কে কিছু বলেন৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুটিনের আইনি রক্ষাকবচের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে আপাতত কিছু করা সম্ভব নয় বলেও তদন্তকারীরা মন্তব্য করেন৷ তবে তদন্তে উঠে আসা সব তথ্যপ্রমাণ মহাফেজখানায় রাখা থাকবে৷ কোনো এক সময়ে খোদ রাশিয়ায় তদন্ত চালানো সম্ভব হলে হয়তো আদালতে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ উঠে আসবে বলে আশা রয়েছে৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, এপি)