ম্যালেরিয়া মোকাবিলার প্রচেষ্টা
৩ জুন ২০১৫সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে ট্রপিকাল ইনস্টিটিউটে ম্যালেরিয়া গবেষণা প্রকল্পের একটা অংশ পরিচালিত হচ্ছে৷ এখানে বিজ্ঞানীরা ম্যালেরিয়া বহনকারী ও প্যাথোজেন পরীক্ষা করছেন৷ মশা পালনের ল্যাবে রয়েছে উষ্ণ আলো, বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবেশের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ হান্স-পেটার বেক অনেককাল ধরে মশা নিয়ে কাজ করছেন৷ এই প্রজাতির মশা প্রাণনাশক ম্যালেরিয়ার প্যাথোজেন পরিবহণ করে – যার নাম প্লাসমোডিয়াম ফালসিপারাম৷
মাইক্রোস্কোপের নীচে একমাত্র এই প্যারাসাইট-কে নীল রিং-এর মতো দেখতে লাগে৷ তারা মানুষের লাল রক্তকোষের উপর হামলা চালায়৷ সুইস টিপিএইচ-এর হান্স পেটার বেক বলেন, ‘‘এই প্যারাসাইট বিশেষ উপায়ে ‘ক্যাপিলারি ওয়াল'-এ জাঁকিয়ে বসে৷ এটা প্রতিরোধ করতে পারলে রোগের লক্ষণ দূর করা যেত৷ লাল রক্তকোষের ভিতরে তাদের প্রবেশ প্রতিরোধ করতে পারলে, প্যাথোজেনের বংশবৃদ্ধিও প্রতিরোধ করা যেত৷''
বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদ্রিয়ান নায়ের বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম, আমরা ন্যানো প্রযুক্তি ও পলিমার কেমিস্ট্রি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র কাঠামো তৈরি করতে পারবো৷ অবশ্যই এর প্রয়োগের চেষ্টা করা উচিত৷''
যেমন ভাবা, তেমনি কাজ৷ আদ্রিয়ান নায়ের প্রায় চার বছর ধরে বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্যারাসাইট-দের বোকা বানানোর চেষ্টা করে চলেছেন৷ এর জন্য তিনি পলিমারের মিশ্রণ ঘটাচ্ছেন৷ উপাদানগুলি সহজ হলেও তা কাজে লাগিয়ে সঠিক ফলাফল পাওয়া কঠিন৷ কারণ টিউবের মধ্যে তা থেকে কৃত্রিম বুদবুদ তৈরি হওয়ার কথা, যা এতই ক্ষুদ্র যে খালি চোখে দেখা যাবে না৷ আইডিয়া হলো, এই বুদবুদ মানুষের রক্তকোষের সারফেসের মতো দেখতে হবে৷
বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদ্রিয়ান নায়ের বলেন, ‘‘কোষ থেকে প্যাথোজেন বের হবার পর এটি তাকে ফাঁকি দিতে পারবে৷ প্যাথোজেন যে রক্তকোষ দেখবে, তা আসলে নকল৷ তার মস্তিষ্ক নেই, চিন্তাভাবনারও বালাই নেই৷ ফলে সেটি সরাসরি সংযুক্ত হয়ে যাবে৷ তারপর সেটি আমাদের কাঠামোর সঙ্গেও সংযুক্ত হবে৷ সেটি ঠিকমতো কাজ করলে প্যাথোজেনের মোকাবিলা করতে পারবে৷ এটাই ছিল মৌলিক আইডিয়া, যে কাজে আমরা এখন সফল হয়েছি৷''
সবুজ রংয়ের এই প্যাথোজেন আর হামলা চালাতে রক্তকোষের দিকে নয়, বরং কৃত্রিম বুদবুদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ সেখানে ঢুকলে তারা বংশবৃদ্ধি না করতে পেরে মরে যাবে৷ কিন্তু এই বুদবুদের আকার শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য শূন্য দুই মিলিমিটারের বেশি বড় হলে চলবে না৷
আদ্রিয়ান নায়ের বলেন, ‘‘ন্যানো কাঠামো খুব বড় হলে এবং সেটিকে শরীরে প্রবেশ করালে তা রক্তের মধ্যে সঞ্চালন করবে না৷ কিন্তু ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে সেটাই তো প্রয়োজন৷ এমন বুদবুদ তৈরি করা কঠিন নয়৷ কিন্তু ন্যানো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ভল্ফগাং মায়ার জানেন, এখনো অনেক বিষয়ের মীমাংসা হয়নি৷
ভল্ফগাং মায়ার বলেন, ‘‘এটিকে অ্যাক্টিভ এজেন্ট হিসেবে শরীরে ঢোকাতে হলে জানতে হবে, সেটি কতটা স্থিতিশীল, ব্যবহারের আগে কতদিন তা অক্ষত রাখা যায়৷ ওষুধ কিংবা ইঞ্জেকশন হিসেবে ব্যবহার করার কতদিন পর সেটি ভেঙে পড়ে?
ল্যাবে পরীক্ষা শেষ হলে প্রথমে ইঁদুর, তারপর মানুষের উপর পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ আদ্রিয়ান নায়ের বলেন, ‘‘কোনো কিছু খুব ভালো কাজ করলেও তা বাজারে আনতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে৷ এটাই বাস্তব৷ আশার কথা হলো, কিছু হাসিল করা গেছে৷ তাই সময় চাই, বিনিয়োগও করতে হয়৷''
কৌতূহল ও ধৈর্য ভবিষ্যতে ম্যালেরিয়ার নতুন ওষুধ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে৷